চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে মরছে মানুষ, তবু ঘুম ভাঙে না চসিকের!

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। আক্রান্তের পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুও। তবু মশা নিধনে তেমন কোনো তৎপরতা নেই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক)। এতে ক্ষুব্ধ নগরবাসী।

আজ সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে ২১ দিনে মারা গেছে ৮ জন। গতকাল থেকে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৭২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।

এরমধ্যে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২০ জন, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে ১১ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৪ জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন এবং নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৫ জন।

এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু করা হয়েছে ডেঙ্গু কর্নার।
তবে মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের তেমন ভূমিকা না থাকায় ক্ষুব্ধ নগরবাসী।

সরেজমিনে মুরাদপুরের কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করে দেখে গেছে, নালা, খাল, বাসাবাড়ির পাশের ছোট-বড় ড্রেনে বদ্ধ পানিতে ভনভন করছে মশা।

এদিকে, ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ। চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে গত রোববার মশকনিধনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাতেও ঘুম ভাঙেনি চসিক সংশ্লিষ্টদের।

মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা মুসতাক হোসেন বলেন, এলাকায় প্রতিটি নালায় পচা পানি জমে আছে। গত এক মাসের বেশি সময় সিটি কর্পোরেশন থেকে কোনো কীটনাশক ছিটানো হয়নি। সামান্য মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না সিটি কর্পোরেশন, তাহলে তারা আমাদের সেবাগুলো কীভাবে দেবে?

সুশাসনের জন্য নাগরিক চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু যেহেতু মশাবাহিত রোগ, মাশা নিধনে চসিকের কোন তৎপরতা চোখে পরছে না। অতীতে লুটপাটের কারণে হয়নি, বর্তমানে ডেঙ্গু রোধ করতে হলে যথাযথ ওষুধ ছিটানো, মনিটরিং করে নির্মাণাধীন ভবনের ব্লক, ফুলের টব, বাসা বাড়ীর আশেপাশে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গুর লার্ভা না জন্মে সেটা সিটিকর্পোরেশনকে নিশ্চিত করতে হবে। কাগজে-কলমে সংস্থাটি মশা মারতে কোটি টাকা খরচ করলেও বাস্তবে দৃশ্যমান নয় মশকনিধন কার্যক্রম।

তবে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ৪১ ওয়ার্ডেই নিয়মমাফিক মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এরপরও কয়েকটি ওয়ার্ডে মশা কমছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশার জীবনচক্র বদলে যাচ্ছে। বর্তমানে এ সময়ে প্রতিবছর ডেঙ্গু হয়ে থাকে আবহাওয়ার কারণে। তাই ডেঙ্গু মোকাবেলায় সকলের সচেতনতা প্রয়োজন। সচেতনতা বাড়াতে আমরা প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছি।

তিনি বলেন, রেডক্রিসেন্ট ও স্বেচ্ছাসেবক দ্বারা নগরীর সকলের নিকট সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত লিফলেট বিতরণ ও নানা কর্মসূচি চলমান আছে। পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচলনা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত বছর নগর ও বিভিন্ন উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট ভর্তি হয়েছিল ১৪ হাজার ৮৭ জন। এরমধ্যে মারা যায় ১০৭ জন। এছাড়া ২০২২ সালে মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ৪৪৫ জনের মধ্যে মারা যান ৪১ জনের, ২০২১ সালে আক্রান্ত হয় ২২১ জন এবং মারা যায় ৫ রোগী।

চাটগাঁ নিউজ/এআইকে/এসএ

Scroll to Top