চট্টগ্রামে করাচির জাহাজ, কী ছিল সেই জাহাজে?

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রথমবারের মতো পণ্য নিয়ে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে একটি জাহাজ । স্বাধীনতার পর এই প্রথম কোন জাহাজ করাচি বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। পানামার পতাকাবাহী জাহাজটির নাম ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’।

তবে এই জাহাজটি করাচি থেকে কেন কী উদ্দেশ্যে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে? নজিরবিহীন নিরাপত্তা বলয়ের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এমন কি পণ্যই বা খালাস করা হলো?- এই আলোচনায় সরগরম চারপাশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সব মিডিয়ায় মোস্ট রিডিং নিউজ এখন এই জাহাজ সংবাদ। তাই চিন্তার ভাজও বেড়েছে ভারতের কপালে!

আমদানিকারক সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তান থেকে সরাসরি কোন জাহাজ বাংলাদেশের বন্দরে নোঙর করত না। তবে এর পেছনে কিছু কারণও ছিল। বাংলাদেশ সরকারের কিছুটা কড়াকড়ি ছিল শুরু থেকেই। পাকিস্তানের পণ্য বাংলাদেশের বন্দরে পৌঁছানোর পর শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হতো। তাছাড়া সমুদ্রপথে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের বন্দরগুলোর চেয়ে বেশি। সি ডিসট্যান্স ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী—এ দূরত্ব ২ হাজার ৬১২ নটিক্যাল মাইলের বেশি। তাই আমদানিকৃত পণ্য পাকিস্তান থেকে প্রথমে জাহাজে করে শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া অথবা সিঙ্গাপুরের বন্দরে আনা হতো চট্টগ্রামমুখী কনটেইনারগুলো। পরে এসব বন্দর থেকে চট্টগ্রামমুখী ফিডার জাহাজে তা তুলে দেওয়া হতো। এতে করে পাকিস্তান থেকে পণ্য আনতে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় অনেক বেশি পড়ে যেত।

তবে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পাকিস্তানের সঙ্গে পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে। গত ২৯ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তা তুলে নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দুবাইভিত্তিক কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ‘ফিডার লাইনস ডিএমসিসি’ কয়েকটি দেশের বন্দরকে যুক্ত করেছে তাদের চালুকৃত নতুন সেবায়। তাদের এই সেবায় যুক্ত জাহাজটি প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে পাকিস্তানের করাচি বন্দরে আসবে। এরপর ভারতের মুন্দ্রা, ইন্দোনেশিয়ার বেলাওয়ান ও মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং হয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে।

চট্টগ্রামে খালাস হওয়া পণ্য

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবারে চট্টগ্রামে এসে পণ্য খালাস শেষে মঙ্গলবার ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যায় জাহাজটি। যাওয়ার আগে জাহাজটি থেকে ৩৭০ একক কনটেইনার খালাস হয়। এর মধ্যে করাচি বন্দর থেকে আনা হয়েছে ২৯৭ একক কনটেইনার। এর মধ্যে ১১৫ কন্টেইনার সোডিয়াম কার্বনেট বা সোডা অ্যাশ আমদানি করা হয়েছে। টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এটি। খনিজ পদার্থ ডলোমাইট রয়েছে ৪৬ কনটেইনারে। মোট ৩৫ একক কনটেইনারে আনা হয়েছে চুনাপাথর। ম্যাগনেশিয়াম কার্বোনেট আনা হয়েছে ছয় কনটেইনারে।

এ ছাড়া কাচশিল্পের কাঁচামাল ভাঙা কাচ আনা হয়েছে ১০ কনটেইনারে। শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের কাঁচামাল কাপড়, রং ইত্যাদি রয়েছে ২৮ কনটেইনারে। একটি কনটেইনারে রয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। এসব পণ্য আমদানি করেছে আকিজ গ্লাস কারখানা, নাসির ফ্লোট গ্লাস, প্যাসিফিক জিনস, এক্স সিরামিকস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

শিল্পের কাঁচামাল ছাড়াও পেঁয়াজ আনা হয়েছে ৪২ একক কনটেইনারে। ১৪ একক কনটেইনারে আলু আমদানি হয়েছে। ঢাকার হাফিজ করপোরেশন, এম আর ট্রেডিংস ও চট্টগ্রামের আল্লাহর রহমত স্টোর এসব পেঁয়াজ-আলু এনেছে। পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্য পণ্যের ওজন ৬,৩৩৭ টন। পাকিস্তানের ১৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য সরবরাহ করেছে।

জাহাজটিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা হয়েছে ৭৩ একক কনটেইনার।

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, জাহাজটি কনটেইনারগুলো নামিয়ে বন্দর ত্যাগ করেছে মঙ্গলবার। আমদানিকারকেরা এখন এসব পণ্য খালাসের জন্য কাস্টমস প্রক্রিয়া শুরু করবেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থ বছরে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয়েছে। ওই অর্থ বছরে পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি ব্যয় ছিল ৮০ কোটি ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে আমদানি হয়েছে ৭৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের পণ্য। আবার একই সময়ে পাকিস্তানে ৬ কোটি ২৪ লাখ ডলারের পণ্য।রপ্তানি করা হয়েছে।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি /জেএইচ 

 

Scroll to Top