‘গ্রুপিংয়ে অশান্ত রাউজান’—ছাত্রদল নেতাকে তুলে নিয়ে মারধর, মুক্তিপণ দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বে ক্রমেই অশান্ত হয়ে উঠেছে উত্তর চট্টগ্রামের রাউজান। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাউজানে বিএনপি ও তার অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িয়ে পড়েছে জবর-দখল, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, অপহরণ বাণিজ্যে। এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে নিজেরাই বিভক্ত হয়ে পড়েছে গ্রুপিংয়ে। এক গ্রুপের কর্মীদের হাতে হামলা, মামলা, অপহরণের শিকার হচ্ছেন একই দলের অন্য গ্রুপের নেতাকর্মীরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এই এলাকার সাবেক সাংসদ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারীদের মধ্যে এই গ্রুপিং রাজনীতি চলমান। গ্রুপিংয়ের জেরে অক্টোবর মাসেই এখানে ঘটেছে দুইটি অপহরণের ঘটনা। দুই ঘটনাতেই একই দলের এক গ্রুপের কাছে অপহরণের শিকার হয়েছেন অপর গ্রুপের ছাত্রদল নেতা।

২৯ অক্টোবর গভীর রাতে রাউজান নোয়াহাট এলাকা থেকে নুরুল আমিন বাপ্পী নামে এক ছাত্রদল নেতাকে অপহরণ করে মারধরের পর মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

নুরুল আলম বাপ্পীর আত্মীয়স্বজনদের অভিযোগ, গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। অপহরণের পর নুরুল আলম বাপ্পীর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। পরে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে বাপ্পীকে উদ্ধার করা হয় বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুরুল আমিন বাপ্পীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাত আনুমানিক ২টার দিকে আমি কদলপুর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আমার মাকে দেখতে মেডিকেলে আসছিলাম। নোয়াহাট পার হলে মামুন, জানে আলম, আবু তৈয়ব ও ফরিদসহ আরো বেশ কয়েকজন লোক মিলে আমাকে তুলে নিয়ে যায়। এসময় তারা আমাকে বেদম মারধর করে। একপর্যায়ে আমার মোবাইল থেকে আমার বাবাকে ফোন দিয়ে ২০ লাখ মুক্তিপণ দাবি করে। আমার পরিবার অনেক কষ্টে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণে আমাকে মুক্ত করে। তারা আমার ডিসকভার ব্রান্ডের একটি মোটরসাইকেল ও পকেটে থাকা ১৮/২০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাতে রাউজান থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী ফাহমিদা সুলতানা।  এই ব্যাপারে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মাহবুবুর রহমান বলেন,  বিষয়টি নিয়ে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্তদের আটকের চেষ্টা চলছে।

উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউসুফ তালুকদার বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে দক্ষিণ রাউজান যেভাবে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য ছিল। এখন জানে আলম, মামুন ওদের নেতৃত্বে রাউজানে হামলা, অপহরণ এগুলো চলছে। দক্ষিণ রাউজানে এই পর্যন্ত ১০টি হামলা, চাঁদাবাজি, অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এই সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি।

জানা গেছে,  এ দুই নেতাই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার গ্রুপের অনুসারী। গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর সমর্থকরা এই অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর  বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় এলাকা থেকে রাউজান উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন সোহেল ও নোয়াপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ওইদিন বিকাল ৩টার দিকে কর্ণফুলী নদীর একটি চর এলাকা থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/এসএ

Scroll to Top