রাঙামাটি প্রতিনিধি : ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজসে রাঙামাটির লংগদু উপজেলার কয়েকশো প্রান্তিক হতদরিদ্র কৃষককে ঋণের ফাঁদে ফেলে অন্তত ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রভাবশালী একটি চক্র। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে সরকারি সহায়তার নামে চক্রটি ঋণের ফাঁদে ফেলেছে স্থানীয় কৃষকদের। প্রতারণার মাধ্যমে চক্রটি সোনালী ব্যাংক লংগদু শাখার অন্তত ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, কারও নামে ৩৫, কারও নামে ৬৫ হাজার আবার কারও নামে লাখ টাকার ক্ষুদ্র ঋণ পরিশোধের নোটিশ পাঠিয়েছে রাঙামাটির লংগদু’র সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এই গায়েবি ঋণের বিচার পেতে ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন করেছে কয়েকশত ভুক্তভোগী।
তাদের দাবি- এখানকার ৯০ ভাগ মানুষ ব্যাংক থেকে কখনও কোনো ঋণই নেননি। কেউ কেউ ঋণ নিলেও তারা কৃষি ব্যাংক থেকে নিয়েছেন। সোনালী ব্যাংক থেকে নয়। কিন্তু ঋণ ছাড়ের একযুগ পর হঠাৎ করেই যেন ব্যাংক কর্মকর্তাদের ঘুম ভাঙল। তারা একযোগে নোটিশ পাঠিয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষের কাছে। এখন তাদের মাথায় হাত।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গত ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে সরকারি সহায়তা প্রদানের আশ্বাসে জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে ঋণের ফাঁদে ফেলেছে একটি প্রভাবশালী চক্র। ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একটি দালাল চক্র এই কাজ করেছে। জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রথম অংশের সঙ্গে অন্যজনের দ্বিতীয় অংশজুড়ে দিয়ে ভুয়া কাগজ তৈরি করে তাদের নামে কৃষি ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে। কার্ডে উল্লেখিত নাম, জন্মতারিখ, পিতা ও মাতার নামের অংশ ঠিক রেখে পেছনের ঠিকানার অংশটি পরিবর্তন করে মাইনীমূখ ইউনিয়নের সোনাই এলাকা করা হয়েছে। যেটা তাদের সঠিক ঠিকানা নয়। এভাবেই সবার সঙ্গে প্রতারণা করে ঋণের ফাঁদে ফেলা হয়েছে। যা তারা জানতেন নন।
ভুক্তভোগীরা জানান, তারা ঋণ পরিশোধের নোটিশ পাওয়ার পর খোঁজখবর নিয়ে কয়েকজন কর্মকর্তার নাম জানতে পেরেছেন; যারা বিগত একযুগ ধরে এই ঋণের তথ্য গোপন করে গোটা ব্যাংকটিকেই জালজালিয়াতির আখড়া বানিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংক লংগদু শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক আবুল হাসেম উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিষেধের অজুহাতে কথা বলতে রাজি হননি।
লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার বলেন, আমি গরিব গ্রামবাসীর কাছ থেকে ঘটনা জানার পর উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি উত্থাপন করি এবং প্রকৃত দায়ীদের খুঁজে বের করা পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে হয়রানি না করার অনুরোধ জানিয়েছি।
তিনি বলেন, সাধারণ গ্রামবাসী প্রতারিত হয়েছে। তাদের বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় দেখা উচিৎ এবং প্রকৃত দায়ীদের খুঁজে বের করা উচিৎ।
এ বিষয়ে জানতে সোনালী ব্যাংক রাঙামাটি’র প্রিন্সিপাল অফিসে গেলে সেখানে কর্তব্যরত সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম ক্যামেরার সামনে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি ঘটনাটি নজরে আসার পর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ