নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর অপসারণ দাবিতে চলমান বিক্ষোভের মুখে পদ ছেড়েছেন হাসপাতালের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা, এক পরিচালকসহ চার জন। তবে সেই জাহাঙ্গীর চৌধুরীর টিকিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
জানা গেছে, গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে তিনি ডায়াবেটিক হাসপাতালে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে হাসপাতালে না আসলেও স্বপদেই বহাল রয়েছেন। নিজের পক্ষীয় কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে কর্তৃত্ব বজায় রাখতে চাচ্ছেন তিনি। একদিকে পদ ছাড়ছেন না জাহাঙ্গীর চৌধুরী অন্যদিকে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলমান রাখার ঘোষণা বিক্ষোভকারীদের। উভয় পক্ষের এমন অবস্থানে বিপাকে পড়েছেন হাসপাতালের সেবা নেওয়া হাজার হাজার ডায়াবেটিক রোগী।
শনিবার (৫ অক্টোবর) সকালে হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর পদত্যাগ, প্রভিডেন্ট ফান্ডের হিসাব ও নানা দুর্নীতির বিচারসহ ১৪ দফা দাবি পূরণে বিক্ষোভ করেছে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ , অবৈধভাবে সভাপদি পদে বসে জাহাঙ্গীর চৌধুরী তার ভাতিজাদের কাউকে এডমিন অফিসার, কাউকে অ্যাকাউন্ট অফিসার পদে চাকরি দিয়েছেন। জাহাঙ্গীর চৌধুরী গত ১০ বছর যাবত কর্মকর্তা কর্মচারীদের কোন বেতন ভাতা বৃদ্ধি করেননি। কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ৩১ কোটি টাকা তছরূপ করেছেন। এই টাকার কোন হিসাব দিতে পারছেন না। তার পরিচয় ব্যবহার করে পারিবারিক সদস্যরা বছরের পর বছর ধরে হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে বকেয়া নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকার ওষুধপত্র। হাসপাতালের দৈনিক আয় ১০ লাখ টাকার অধিক। তবে এখনো পর্যন্ত হাসপাতালের কোন সঞ্চয় হিসাব নেই। নানা অজুহাতে হাসপাতালের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে চাকরিচ্যুত করেছেন তিনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ২ কোটি টাকার অনুদান হাসপাতালের ফান্ডে জমা না দিয়ে নিজের একাউন্টে জমা রেখেছেন জাহাঙ্গীর চৌধুরী। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হলেও তিনি ২৭ লক্ষ টাকা হাসপাতালের ফান্ডে জমা করেননি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সমূহ অভিযোগে জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্থাস্থ্য বিভাগ তৎপর হয়। ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট প্রথম অভিযোগ উত্থাপিত হয়। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত বছরের ২৫ জানুয়ারি দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীসহ কমিটির সব সদস্যদের সাময়িক বরখাস্ত করে সমাজসেবা অধিদপ্তর। এর পর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মোস্তফা মোস্তাকুর রহিম খানকে। তবে তিনি দায়িত্ব নিয়েও সাত দিনের মাথায় অব্যাহতি নেন।
তবে প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পর হাসপাতালে জাহাঙ্গীর চৌধুরীর অদৃশ্য নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব শুরু হয়। তার অনুসারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ মদদ-ইন্ধনে হাসপাতালে অনিয়ম দুর্নীতি চলে। এমন পরিস্থিতিতে শনিবার আন্দোলনে নামে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
পরে আন্দোলনের মুখে হাসপাতালের পরিচালক নওশাদ আজগর চৌধুরী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমান উল্লাহ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল, প্রধান নীরিক্ষা কর্মকর্তা ইয়াছিন চৌধুরী পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
চাটগাঁ নিউজ/ উজ্জ্বল/জেএইচ