নিজস্ব প্রতিবেদক : ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন আশার আলো হয়ে আসছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ক্যান্সার ইনস্টিটিউট। ২ হাজার ৩৮৮ কোটি ২৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হচ্ছে আলাদা ক্যান্সার ইউনিট। ১৫ তলা বিশিষ্ট ভবনের দ্বিতীয় থেকে সপ্তম তলা জুড়ে থাকছে ১৮০ শয্যাবিশিষ্ট ক্যান্সার ইউনিট। যেখানে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি অনকোলজি, রেডিওথেরাপি, ব্র্যাকিথেরাপি এবং অনকো-সার্জারিও থাকবে। প্যাট-সিটি স্ক্যান যন্ত্র স্থাপিত হলে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় রোগীরা পরীক্ষা করতে পারবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে ক্যান্সার ইউনিট প্রতিষ্ঠিত হবে।
চমেক হাসপাতালের তথ্য মতে, চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বহির্বিভাগে ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত নতুন-পুরোনো মিলে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার রোগী। আক্রান্ত ক্যান্সার রোগীদের ৬০ ভাগই নারী।
রেডিওথেরাপি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বহির্বিভাগে গত বছর ৩ হাজার ১৩১ জন পুরুষ রোগী চিকিৎসা নেন। এদের মধ্যে ২০ শতাংশ গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত। এছাড়া ২ হাজার ৫২০ জন নারী রোগী চিকিৎসা নেন। এদের মধ্যে ২৪ শতাংশ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। অপরদিকে অন্তঃবিভাগে ৩ হাজার ১০৮ জন ক্যান্সার রোগী চিকিৎসা নেন। হাসপাতাল থেকে কেমোথেরাপি পেয়েছেন ২ হাজার ৩৩৩ জন, রেডিওথেরাপি পেয়েছেন ৭৭৫ জন। ব্র্যাকিথেরাপি পেয়েছেন ৬০০ জন।
ক্যান্সার শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ জরায়ুমুখের ক্যান্সার আক্রান্ত, খাদ্যনালির ক্যান্সার আক্রান্ত ১৭ শতাংশ, মুখগহ্বর ও গলার ক্যান্সার আক্রান্ত ১৫ শতাংশ, স্তন ও ফুসফুস ক্যান্সার আক্রান্ত ১২ শতাংশ।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বংশগত, পরিবেশগত ও কিছু জীবনাচরণের কারণেই ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয়। ত্বকের ক্যান্সার, মুখের ক্যান্সার, খাদ্যনালির ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার, পাকস্থলীতে ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, জরায়ুমুখের ক্যান্সার, পায়ুপথের ক্যান্সার, ব্লাড ক্যান্সারের রোগী বাড়ছে।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বংশগত, পরিবেশগত ও কিছু জীবনাচরণের কারণেই ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয়। ত্বকের ক্যান্সার, মুখের ক্যান্সার, খাদ্যনালির ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার, পাকস্থলীতে ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, জরায়ুমুখের ক্যান্সার, পায়ুপথের ক্যান্সার, ব্লাড ক্যান্সারের রোগী বাড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বহুগুণে। ২০২২ সালের তুলনায় ২০৫০ সালে দেশে দ্বিগুণেরও বেশি নতুন ক্যান্সার রোগী শনাক্ত হতে পারে। বাংলাদেশে প্রতি বছর বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৯১ হাজার ৩৩৯ জন। এছাড়াও বছরে প্রায় দেড় লাখেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হন এই মরণব্যাধি ক্যানসারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) মতে, এটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান মৃত্যুর কারণ।
ক্যান্সার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবক্যানের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ১৩ থেকে ১৫ লাখ।
জানা গেছে, চট্টগ্রামসহ ৮টি বিভাগীয় শহরের (ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও খুলনা) মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একশ শয্যার একটি করে ক্যান্সার ইউনিট স্থাপনে এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ২০১৯ সালে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় অনুমোদন পায় ক্যান্সার ইউনিট স্থাপনের প্রকল্পটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে গণপূর্ত বিভাগ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩৮৮ কোটি ২৯ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা। ২০১৯ থেকে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর সময়সীমা আবারও বাড়িয়ে ২০২৫ সাল করা হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ভবনটির দুইটি বেইসমেন্ট ১৫ হাজার ৫৫০ বর্গফুট, নিচ তলা ১৬ হাজার বর্গফুট, প্রথম তলা ১৪ হাজার ৯৪২ বর্গফুট, দ্বিতীয় তলা ১৬ হাজার ৯৬ বর্গফুট। এছাড়াও চতুর্থ তলা ১৬ হাজার ৯৬ বর্গফুট, পঞ্চম থেকে পনের তলা ১৪ হাজার ৮৮৬ বর্গফুটসহ সর্বমোট ভবনটি হবে ২ লক্ষ ৬০ হাজার বর্গফুট।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নানা অজুহাতেই প্রকল্পের এমন ধীরগতি। এ নিয়ে ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক কামরুল হাসান বলেন, এ বছরের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও বাজেট বাড়েনি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তছলিম উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্মিত এই ভবনে থাকবে তিনটি বিভাগ। ক্যান্সার হাসপাতালে থাকবে ২২০টি শয্যা এবং অত্যাধুনিক ক্যান্সার মেশিন। ফলে আমাদের রোগীদের অন্য কোথাও রেফার করতে হবে না।
এই ক্যান্সার ইনস্টিটিউট দেশের ক্যান্সার রোগীদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলেও উল্লেখ করেন চমেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তছলিম উদ্দিন।
চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/এসএ