নিজস্ব প্রতিবেদক : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে দক্ষিণ চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা পটিয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন।
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২ প্রার্থী। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ২৯ মে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীরা হলেন-পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র হাজী মুহাম্মাদ হারুনুর রশিদ লড়ছেন আনারস প্রতীক নিয়ে।মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: দিদারুল আলম লড়ছেন দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে।
নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে অর্থবিত্তে, নগদ টাকা, সম্পদে কেউ কারো চেয়ে কম নন। দুইজনই কোটিপতি ব্যবসায়ী এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় হাড্ডা হাড্ডি লড়াইয়ের জমে উঠেছে ভোটের মাঠ।
হলফনামা হতে প্রাপ্ত তথ্য মতে, হাজী মুহাম্মদ হারুনর রশীদ শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে হফলনামায় মাস্টার্স পাস (এম.কম ব্যবস্থাপনা) উল্লেখ করেেছন।
পুরোদস্তুর এই ব্যবসায়ী কৃষিখাত থেকে আয় করেন ৪০ হাজার টাকা। বাড়ি, এপার্টমেন্ট, দোকান বা অন্যান্য ভাড়া বাবদ আয় করেন ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে তার আয় ২ কোটি ৬ লাখ ৬১ হাজার ৩৪০ টাকা।
নগদ রয়েছে ১২ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা, স্ত্রীর কাছে রয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৬২ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে তার জমা রয়েছে ১৯ লাখ ৯৩ হাজার ৫১৪ টাকা, স্ত্রীর রয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় কোম্পানির শেয়ারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমূহের মূলধন সহ ৮ কোটি ৬ লাখ ৬ হাজার ২৬৭ টাকা, স্ত্রীর রয়েছে ৩ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্রে রয়েছে ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, স্ত্রীর রয়েছে ১০ লাখ ৮৬ হাজার ২৫০ টাকা।
বর্তমানে ১৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি প্রাইেভট কার রয়েছে তার। স্বামী ও স্ত্রীর সবমিলিয়ে স্বর্ণ অলংকার রয়েছে ৪২ ভরি যার দাম অর্জনকালীন সময়ের উল্লেখ করার হয়েছে মাত্র ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। তার বাড়িতে ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা মূল্যের। আসবাবপত্র রয়েছে ৪০ হাজার টাকার।
কৃষি জমির পরিমাণ ৬২.২ শতক যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৩১ হাজার ৯২৭ টাকা। অকৃষি জমির পরিমাণ ১০৬.৬৮৫ শতক যার মূল্য দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৫৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। একটি ফ্যাক্টরীর দালান রয়েছে যার মূল্য ১০ লাখ টাকা। ২৩৬০ বর্গফুট জায়গায় একটি এপার্টমেন্ট রয়েছে তার। যার দাম ৫৯ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, পটিয়া শাখা থেকে তিনি ব্যাংক ঋণ নিয়েছেন ৭ কোটি ৮৭ লাখ ৯৯৩ টাকা।
এদিকে অপর প্রার্থী মো: দিদারুল আলমের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে হেরফের রয়েছে। বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারণায় দাবী তিনি করেছেন সরকারী কমার্স কলেজ থেকে অনার্সে মাস্টার্স করেছেন। কিন্তু নির্বাচনী হলফনামায় তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে ডিগ্রি পাস (বি.কম) উল্লেখ করেছেন। তিনিও রাজনীতির পাশাপাশি পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী।
হলাফনামায় দেওয়া তথ্য মতে কৃষি খাত, মৎস্যসহ থেকে এই প্রার্থী আয় করেন ২০ হাজার ২০০ টাকা। ব্যবসা থেকে তার আয় ৫ কোটি ২৫ লাখ ৩৯ হাজার ৮০০ টাকা।
ব্যবসা থেকে স্ত্রীর আয় ৭ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আয় করেন ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
ব্যবসা থেকে সন্তানের আয় ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।
নগদ রয়েছে ৩৬ লাখ ৭২ হাজার ৮৭৫ টাকা, স্ত্রীর কাছে রয়েছে ৩ লাখ ৫ হাজার ১০০ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে তার জমা রয়েছে ১ কোটি ৫ লাখ ৪৮ হাজার ২২৫ টাকা, স্ত্রীর রয়েছে ২০ লাখ টাকা। পুত্র সন্তানের ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড কেনা আছে।
বর্তমানে ৭৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের একটি জীপ গাড়ি রয়েছে তার। স্ত্রীর রয়েছে ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি প্রাইভেট কার।
স্বামী ও স্ত্রীর সব মিলিয়ে স্বর্ণ অলংকার রয়েছে ৩০ ভরি। অর্জনকালীন সময়ের হিসেবে যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ৮ হাজার টাকা। তার বাড়িতে ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা মূল্যের। আসবাবপত্র রয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার।
কৃষি জমির পরিমাণ ৩ কানি ১ কন্ট ৬ তিল যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ২১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।অকৃষি জমির পরিমাণ ১৫৪৭ বর্গফুট ও একটি ১১০ বর্গফুটের গ্যারেজ রয়েছে যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩৩ লাখ ২৮ হাজার ৬৯৬ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর পশ্চিম ষোলশহরে ৩ গন্ডা ১ কন্ট সোয়া ৫ দন্ত প্লট রয়েছে, যার মূল্য ২৪ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বলা হয়েছে।
এছাড়া চট্টগ্রামে কল্পলোক আবাসিক এলাকায় ২.৬৯ কাঠার প্লট রয়েছে, যার মূল্য ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। রাজধানী ঢাকার পশ্চিম মতিঝিলে ১৩২০ বর্গফুটের ১ টি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার মূল্য ৩৯ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা।
চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশে ৪ কাঠা এবং সেখানে একটি পুরাতন দালান সহ ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্য দেখানো হয়েছে।
এই প্রার্থীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রয়েল এসোসিয়েটস’র নামে চট্টগ্রামে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখা থেকে ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৭৮ হাজার ৫৪৩ টাকার ঋণ রয়েছে। যা পরবর্তীতে পুনঃ তফসিলীকরণ করা হয়। এছাড়াও চট্টগ্রামে গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক নাসিরাবাদ শাখা থেকে ১ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকার ঋণ রয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট ২য় আদালতে একটি পাঁচলাইশ থানার সি আর মামলা রয়েছে। যা সর্বশেষ প্রতিবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যতা পাওয়া যায়নি এবং অব্যাহতি প্রদানের জন্য প্রার্থনা করা হয়ে বলে হলফনামায় উল্ল্যেখ করা হয়েছে।
এবারের উপজেলা নির্বাচনে ১২৮ টি কেন্দ্রে পটিয়ার ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭৩৮ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৬ জন।
চাটগাঁ নিউজ/এআইকে/এসআইএস