কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ‌‘প্লাস্টিক দানব’, জানান দিচ্ছে ক্ষতির মাত্রা

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষনের ভয়াবহতা সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বানানো হয়েছে ‘প্লাস্টিক দানব’। যে প্লাস্টিকগুলো আবার কুড়িয়ে নেয়া হয়েছে সমুদ্র ও তার আশপাশের এলাকা থেকে। সেগুলো দিয়ে নির্মিত দানবটি দূষণে প্রাণ-প্রকৃতির বিরূপতার সাক্ষ্য দিচ্ছে।

জেলা প্রশাসন কক্সবাজার ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আজ শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) নির্মিত সৈকতের সুগন্ধা সীগাল পয়েন্টে প্রদর্শন করা হয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্যের তৈরি এ দানব ভাস্কর্যের। যেটি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সীগাল পয়েন্টের বালিয়াড়িতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।

যে দানবটি রক্ত-মাংসহীন প্রতীকী হলেও যার হিংস্র থাবায় প্রতিনিয়ত ক্ষত-বিক্ষত মানবদেহ, প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্য। সৈকতে ঘুরতে আসা যে কেউ এটি প্রথম দর্শনে মনে ভয় বিরাজ করলেও কাছে যেতেই সে ভয় কেটে যাবে। আর জানবে দানবটির দেহে বয়ে বেড়ানো প্লাস্টিক দূষণে প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতির মাত্রা।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ মুবারক জানান, গত প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজার, ইনানী ও টেকনাফের সমুদ্র সৈকত থেকে সংগ্রহ করেছে অন্তত ১০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্য। এসব বর্জ্য দিয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নির্মাণ করেছেন এ প্লাস্টিক দানব।

এর আগে গত ৭ নভেম্বর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের জন্য ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ ও স্থানীয়দের জন্য ‘প্লাস্টিক এক্সেঞ্জ মার্কেট’ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া খালি পাত্র, বোতল ও পলিথিনের প্যাকেটের বিনিময়ে যে কেউ নিতে পারবেন চাল, ডাল, তেল, চিনি ও লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি এবং পর্যটকরা জিতে নিবেন বই, কলম, ক্যাপ, ব্যাগসহ বিভিন্ন উপহার। এই কার্যক্রম থেকেই মূলত ১০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভাস্কর ও শিল্পী আবীর কর্মকার জানান, বিদ্যানন্দের ভিন্নধর্মী উদ্যোগ প্লাস্টিক দানবটি তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের একদল শিল্পী। এতে তারা প্লাস্টিক বর্জ্যের পাশাপাশি ব্যবহার করেছেন কাঠ, পেরেক ও গাম সহ আরও কয়েকটি উপকরণ। ভাস্কর্য শিল্পীদের দাবি, এটি এশিয়া মহাদেশের সর্বোচ্চ প্লাস্টিক দানব।

পরিবেশবাদীসহ সচেতন মহল বলছেন, বিদ্যানন্দের ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এতে মানুষ প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত হবেন। বিদ্যানন্দের মত অন্যান্য সংগঠন ও সংস্থাগুলোকে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে এগিয়ে আসার আহ্বান তাদের।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় যে কোন মহৎ উদ্যোগে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে এবং থাকবে।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটক ও স্থানীয়দের মাঝে প্লাস্টিক বর্জ্যের দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগ। আর এটি পুরো পর্যটন মৌসুম সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এটাকে কেন্দ্র করে এখানে প্লাস্টিক দূষণবিরোধী সচেতনতামূলক পথনাটক ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top