এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশায় পরিবর্তন, বাদ যাচ্ছে পাঁচটি র‍্যাম্প

নিজস্ব প্রতিবেদক : অবশেষে চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ১৫টি র‍্যাম্পের মধ্যে পাঁচটি র‍্যাম্প বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)।

সোমবার (২৮ অক্টোবর) সকালে অনুষ্ঠিত চউক’র বোর্ড সভায় এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

১৫ কিলোমিটারের এক্সপ্রেসওয়েতে ১৫টি র‍্যাম্প নির্মাণ ‘নিতান্তই আধিক্য’-এমন অভিযোগে শিক্ষার্থী, নাগরিক, ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে আন্দোলন উঠেছিল। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রাথমিকভাবে পাঁচটি র‍্যাম্প নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিডিএ।

এগুলো হচ্ছে- টাইগারপাস অংশে পলোগ্রাউন্ডের দিক থেকে ওঠার র‍্যাম্প, আগ্রাবাদের জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের সামনে নামার র‍্যাম্প, কেইপিজেডে নামার একটি র‍্যাম্প এবং আগ্রাবাদের এক্সেস রোডের ওঠা–নামার দুটি র‍্যাম্প।

এ বিষয়ে চউকের নির্বাহী প্রকৌশলী ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, জন ও যান চলাচলের সুবিধার্থে নকশায় ১৫টি র‍্যাম্পের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী নকশাও চূড়ান্ত করা হয়। তবে র‍্যাম্প নিয়ে শিক্ষার্থী, নাগরিক, ব্যবসায়ীমহল সহ নানা পক্ষে আপত্তি উঠেছিল। তাই র‍্যাম্প নিয়ে পুনঃপর্যালোচনার জন্য সিডিএর বোর্ড সভায় প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। আজ বোর্ড সভায় সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে পাঁচটি র‍্যাম্প বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

চউক সূত্রে জানা যায়, মূল এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শেষ হলে চলতি বছরের ২৮ আগস্ট থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে পরীক্ষামূলক যানবাহন চলাচল শুরু হয়। বিমানবন্দর ও বন্দরমুখী যানবাহনের চাপ কমাতে র‍্যাম্প ছাড়াই খুলে দেয়া হয় এক্সপ্রেসওয়ে। তবে এখনো ইজারাদার নিয়োগ না দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে উন্মুক্ত করে দেয়ায় ট্রাফিক না মানা, সর্বশ্রেণির যানবাহন চলাচল, নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।

আগের নকশায় লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা বঙ্গবন্ধু টানেল পর্যন্ত ১৫ দশমিক ২ কিলোমিটারের এক্সপ্রেসওয়েতে পতেঙ্গামুখী আটটি ও লালখান বাজারমুখী সাতটি র‍্যাম্পের নকশা করা হয়েছিল। এর মধ্যে একটি র‍্যাম্প জিইসি মোড়ের হোটেল দ্য পেনিনসুলার সামনে, দুটি টাইগারপাসে, চারটি আগ্রাবাদে, বন্দরসংলগ্ন ফকিরহাট এলাকায় একটি, নিমতলায় দুটি, চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকায় দুটি, কর্ণফুলী ইপিজেড সংলগ্ন দুটি ও সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় একটি র‍্যাম্প রাখা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি র‍্যাম্পের কাজও চলমান ছিল। এমন পরিস্থিতিতে এক্সপ্রেসওয়ের নকশা থেকে নতুন সিদ্ধান্তে পাঁচটি র‍্যাম্প বাদ দেয়া হয়েছে।

তবে পরিবর্তিত নকশায় একেবারে পাঁচটি র‍্যাম্প বাদ দেয়ায় এক্সপ্রেসওয়ের নাগরিক উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। র‍্যাম্প
কমে গেলে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারী যাত্রীরা নতুন হয়রানির শিকার হবে। আবার যানজট নিরসনের যে লক্ষ্যে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হয়েছিল তা অনেকটা ম্রিয়মান হওয়ার সম্ভাবনাও সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন সচেতনমহল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর এপ্রিলে শতবর্ষী গাছ কাটা যাচ্ছে,পরিবেশ ধ্বংস হওয়ার অভিযোগ তুলে টাইগারপাসের মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী সড়কের পলোগ্রাউন্ড থেকে পতেঙ্গামুখী র‍্যাম্প নির্মাণ বন্ধে আন্দোলন শুরু করেন পরিবেশকর্মীরা।
সিডিএ অ্যাভিনিউর জিইসি মোড় থেকে পতেঙ্গামুখী একটি র‍্যাম্পের নির্মাণকাজ শুরু হলে এটি বন্ধের দাবি জানিয়ে গত ২৩ মে সিডিএকে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ (বাওয়া)। তাদের দাবি, এই র‍্যাম্পের কারণে প্রায় সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থীর চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি হবে।

তবে এই ছয়টির বাইরেও আগ্রাবাদ ডেবারপাড় থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত র‍্যাম্প নির্মাণেও আপত্তি জানিয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এই র‍্যাম্পটি নির্মাণ করা হলে ৫৯টি দোকান উচ্ছেদ করতে হবে।

সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণের সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ২০১৯ সালে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ হয়েছিল। পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকায়। প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।

চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/এসএ

Scroll to Top