নিজস্ব প্রতিবেদক : পলিথিন বন্ধে সরকার ২০০২ সালে আইন করে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে পলিথিন নিয়ে আইন থাকলেও দীর্ঘ ২২ বছর ধরে এই আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে পলিথিন জব্দ, জরিমানা করা হলেও বাজার থেকে পলিথিনের রাজত্ব যাচ্ছে না কোনমতেই। উৎপাদনকারী, বিপণনকারী বা ভোক্তা সাধারণ সবার অসচেতনতায় পলিথিন যেন হয়ে উঠেছে দোর্দণ্ড পরিবেশ বিনাশী।
এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পলিথিন, প্লাস্টিক ও পলিপ্রোপাইলিন ব্যাগ বন্ধে ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে এবং ১ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে সরকারের এমন ঘোষণায় পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও তা বাস্তবায়ন নিয়ে পরিবেশবিদরা সন্দিহান। তারা বলছেন, পলিথিন বন্ধে এই দীর্ঘ সময়ে অনেকবার অনেক কিছু হয়েছে। কিন্তু বাজার থেকে পলিথিন যায়নি। পলিথিন বন্ধে সরকারকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। তা না হলে পলিথিন বন্ধের বিষয়টি বিগত সময়ের মত এবারো জনগণের কাছে আইওয়াশ হিসেবে পরিচিতি পাবে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে প্রতিমাসে ২০ কোটি পলিথিন বাজারজাত হয়। এই পলিথিন সরবরাহ হয় চট্টগ্রামসহ ঢাকা, নায়ারণগঞ্জ, গাজীপুরের প্লাস্টিক ও পলিথিন কারখানা থেকে। নগরীর চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ থেকেই চট্টগ্রামের পলিথিন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ হয়। এখানে পলিথিন ব্যবসায়ে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর থেকে পলিথিন চট্টগ্রামে ঢুকে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকার ওসমানিয়া গলি, মসজিদ গলি, লাঠি গলি, তক্তার পুল এবং পাহাড়তলী এলাকার কয়েকটি স্থানে গুদাম করে এই পলিথিন ব্যাগ সংরক্ষণ ও বাজারজাত করে চক্রটি। চাক্তাই–খাতুনগঞ্জ এলাকায় দৈনিক গড়ে ৮-১০ টি ট্রাকে পলিথিন আনা–নেওয়া করা হয়। ঢাকা থেকে আসা প্রতিটি ট্রাকে ১৩০ থেকে ১৪০ বস্তা পলিথিন ব্যাগ থাকে। প্রতি বস্তায় বড় আকারের পলিথিন ব্যাগ থাকে ২০ হাজার, ছোট পলিথিন ব্যাগ থাকে আড়াই লাখ। বিভিন্ন সাইজ মিলে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী এলাকা থেকে প্রতি মাসে গড়ে বিশ কোটি পলিথিন ব্যাগ বাজারে সরবরাহ দেওয়া হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের রিসার্চ অফিসার মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করে পলিথিন জব্দ করা হয়। কারখানাগুলোতেও অভিযান পরিচালনা করি। তবে কিছু কারখানা গার্মেন্টস এক্সেসরিজ হিসেবে প্রিন্টেড মোটা পলিথিন বানায়। এগুলো নিষিদ্ধ নয়। ৫৫ মাইক্রোনের নিচে এবং উপরে প্রিন্ট নেই এমন পলিথিন নিষিদ্ধ।
এ বিষয়ে পরিবেশবিদ প্রফেসর ইদ্রিছ আলী চাটগাঁ নিউজকে বলেন, পলিথিন বন্ধে একসাথে চার ধাপে কাজ করতে হবে। উৎপাদন বন্ধ করা, বিপণনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভোক্তা সাধারণকে নিরুসাহিত করা। এর পাশাপাশি পাটজাত ব্যাগ ব্যবহার ও বাজারজাতকরণের উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। পাট উৎপাদনে বর্তমানে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে। উৎপাদিত পাটের সঠিক ব্যবহার ও বাজারজাত করতে পারলে একদিকে যেমন পাট ফিরে পাবে তার সোনালী অতীত, অন্যদিকে ধীরে ধীরে পলিথিন ব্যবহার বন্ধ হবে। শুধু ঘোষণা, মোবাইল কোর্ট বা জেল জরিমানা করে পলিথিন বন্ধ করা যাবে না। পলিথিন কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে। নইলে শেষ পর্যন্ত সব হাঁকডাক তামাশায় পরিনত হবে।
চাটগা নিউজ/উজ্জ্বল/এসএ