উজ্জ্বল দত্ত : জাতীয় অর্থনীতি পরিষদের (একনেক) গত (১৮ সেপ্টেম্বর) সভাতে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি যাচাই বাছাইয়ের কথা বলে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। প্রকল্পটি এখন অনিশ্চয়তার মুখে। এরই মাঝে আগামীকালের একনেকে উঠতে যাচ্ছে ওয়াসার আরেকটি স্যুয়ারেজ প্রকল্প। নানা প্রতিকূলতায় বাস্তবায়নাধীন একটি প্রকল্প যেখানে মুখ থুবড়ে পড়েছে, সেখানে আরেকটি প্রকল্প অনুমোদন হলে তা কবে নাগাদ বাস্তবায়িত হবে বা আদৌ হবে কিনা তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প (ক্যাচমেন্ট ২ ও ৪) নামের স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি আগামীকাল একনেক সভায় উঠছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ১৯৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপানের জাইকা অর্থায়ন চার হাজার ১৫৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সরকারের জিওবি ফান্ড দেবে এক হাজার কোটি ৮৯ লাখ টাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার অর্থায়ন থাকবে ৩৯ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০৩০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের সম্ভাব্য মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে।
কালুরঘাট হামিদচর এলাকায় প্রকল্পের স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করা হবে। এটির দৈনিক ধারণক্ষমতা হবে ৬০ হাজার ঘনমিটার। এছাড়া প্রকল্পের অধীনে প্রধান স্যুয়ারেজ লাইন নির্মাণ করা হবে ১১ কিলোমিটার, শাখা স্যুয়ারেজ লাইন ৭০ কিলোমিটার এবং সার্ভিস লাইন হবে ৭০ কিলোমিটার। প্রকল্পের আওতায় ৯৩২টি ম্যানহোল এবং গৃহ সংযোগ নির্মাণ হবে ১৪ হাজারটি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য বাকলিয়া মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীত এলাকায় ৭৪ একর জায়গা নির্বাচন করা হয়েছে।
ওয়াসা জানায়, এই প্রকল্পের জিওবি ফান্ডের অর্থায়নের ব্যাপারে অর্থ বিভাগের মতামত পাওয়া গেছে। গত ২৩ মে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিইসি সভার সুপারিশ অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম ওয়াসা ও চুয়েটের প্রতিনিধির সমন্বয়ে ব্যয় প্রাক্কলন ভেটিংয়ের জন্য গঠিত কমিটিও মতামত দিয়েছে। পিইসি সভার সুপারিশ অনুযায়ী পূনর্গঠিত ডিপিপি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন আগামীকালের একনেক সভায় অনুমোদন পেলে প্রকল্পটির কাজ শুরুর প্রস্তুতি শুরু হবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম চাটগাঁ নিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প (ক্যাচমেন্ট-২ ও ৪) আমাদের প্রস্তাবিত প্রকল্প ছিল। আগামীকাল একনেকে এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জামালখান, চকবাজার, চান্দগাঁও, শুলকবহর ও ষোলশহরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি, টয়লেট, গেরস্থালি ও সেপটিক ট্যাংকের পানি স্যুয়ারেজের লাইনের মাধ্যমে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে চলে আসবে। প্ল্যান্টে পরিশোধন করে তা আবার পরিবেশে অবমুক্ত করে দেয়া হবে।
অন্যদিকে, তিন হাজার ৩০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াসার গৃহিত প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ নির্ধারিত হয়েছিল। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষের মেয়াদ থাকলেও তা শেষ হয় নি। আবার এর মধ্যে করোনা, পরামর্শক নিয়োগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগে বিলম্ব, ডিজাইন পরিবর্তনসহ ডলারের মূল্য বৃদ্ধির জন্য ওয়াসা প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করে আরডিপিপিতে। একই সাথে কাজের মেয়াদ কাল ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর আবেদন করা হয়। সর্বশেষ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম একনেক সভাতে (১৮ সেপ্টেম্বর) এই প্রস্তাবনা নাকচ করে দেয়া হয়।
তবে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন, উপযোগিতাহীনতা, কাজ শুরুর আগেই ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবনা, দুর্নীতি, প্রকল্প নিয়ে কমিশন বাণিজ্যের কারণে প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি সরকারের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আরও একটি স্যুয়ারেজ প্রকল্প অনুমোদন পেলে তা কখন কিভাবে বাস্তবায়নের মুখ দেখবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কনজ্যুমারস এসোসিয়েশনের সহসভাপতি নাজের হোসাইন চাটগাঁ নিউজকে বলেন, বিগত সময়ে ওয়াসায় বেশ কয়েকটি অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ও বিপুল বাজেটের প্রকল্প নেবার ঘটনা ঘটেছে। কমিশন বাণিজ্য, প্রকল্পের নামে লুটপাট করে কর্মকর্তাদের পকেট ভারী করার জন্য এগুলো নেওয়া হয়। অপ্রয়োজনীয় ও অতিবাজেটের প্রকল্প নিয়ে গ্রাহকের ঘাড়ে ঋণের বোঝা চাপানো হয়েছে তা কোনভাবেই কাম্য নয়।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এসব বিষয় অবগত রয়েছে। তাই প্রকল্প গ্রহণের আগে স্থানীয়ভাবে এর প্রয়োজন আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। প্রয়োজনে স্থানীয় ভাবে এফজিডি/গণশুনানী করে জনগণের মতামত নেওয়া যেতে পারে। একই সাথে প্রকল্পের বাজেট যথাযথ আছে কি না তাও তৃতীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মূল্যায়ন হওয়া দরকার।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ