চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ করলেই তার গলা কেটে ফেলো, আর বিএনপি করলেই মুণ্ডুচ্ছেদ কর— আসলে এগুলো গণতন্ত্র নয়। যে গণতন্ত্রের কথা আমরা বলছি, সেই গণতন্ত্র একটা কথার কথা না, এটা একটা কালচার। এটা একটা সংস্কৃতি। আপনি-আমি কীভাবে কথা বলব, আমি আমার প্রতিবেশির সাথে কীভাবে কথা বলব, আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে কীভাবে কথা বলব, সেই বিষয়গুলো আমাকে শিখতে হবে।
‘গণতন্ত্র হচ্ছে পরমত সহিঞ্চুতা। তোমার কথা বলার অধিকার আছে, আমারও বলার অধিকার আছে। আমি সেটা রক্ষা করব, এটা হল গণতন্ত্র’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আজ এক আলোচনা সভা আয়োজন করে বিএনপি।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন সময়টা সব চাইতে কঠিন। একটু যদি ভুল হয়, তাহলে পেছনে পড়ে যাবেন, খাদে পড়ে যাবেন। আর যদি সঠিক পথে কাজটি করতে পারেন, তাহলে আপনি জয়লাভ করবেন। তাই এইসব দিবসগুলোকে (শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস, মহান বিজয় দিবস) নেগলেট করবেন না, অবহেলা করবেন না। জানার চেষ্টা করবেন এই দিবসগুলো সম্পর্কে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকেই জানেনই না এই বুদ্দিজীবী দিবস কী? এটা তালি মারার দিবস, নাকি তালি মারার দিবস না। এটা মিলাদ পড়ার দিবস, নাকি খিচুড়ি খাওয়ার দিবস? অনেকেই জানে না। আপনারা জানেন? (দর্শক সারিতে থেকে সমস্বরে, না…) এই দিবসে আমাদের সবচেয়ে বরেণ্য ব্যক্তিদেরকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে ভালো ভালো শিক্ষকদেরকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যেত, যেভাবে আমাদের ধরে নিয়ে গিয়ে গুম করে দিত, ওইভাবে তাদেরকেও ধরে নিয়ে গিয়ে গুম করে দিয়েছে, রায়ের বাজারে নারী-পুরুষ সবাইকে হত্যা করেছে। এই জিনিসটা মনে রাখতে হবে। তারা প্রাণটা কেন দিল?’
‘এই যে আয়নাঘর বলেন না, এই আয়নাঘরে কেন নিয়ে যাওয়া হত ছেলেদেরকে? কেন নিয়ে যাওয়া হত নেত্রীদেরকে? কেন নিয়ে যাওয়া হত রাজনৈতিক নেতাদেরকে? একটাই মাত্র উদ্দেশ্যে, তাদেরকে ভয় পাইয়ে দেওয়া, নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে এক ব্যক্তির ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করা। হাসিনার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে হবে, সেই জন্য তারা এভাবে নিয়ে যেত’— বলেন মির্জা ফখরুল।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখছেন ফ্যাসিস্টি হাসিনা পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে সে তার কাজ করছে। ডিজিটালি সে লন্ডনে তার নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা করেছে। অর্থাৎ সে সক্রিয় হচ্ছে, সে অ্যাক্টিভ, সে কাজ করছে আবার হৃত ক্ষমতা ফিরে পাবার জন্য। তো আমাদেরকেও তো অ্যাক্টিভ হতে হবে, যাতে করে আমরা তাকে প্রতিহত করতে পারি, সে যাতে আর ফিরে আসতে না পরে। সেটা কীভাবে হবে?’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একদিকে যেমন ঐক্য, জনগণের দৃঢ় ঐক্য, অন্যদিকে আমাদের মেধা। মেধা দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। যে কথাটা আমি প্রায়-ই বলছি, এই স্লোগান এবং তালি, এটা দিয়ে জিততে পারবেন না। জিততে হলে আপনাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেতে হবে। টুইটার, ফেসবুক— এটার মধ্যে যুদ্ধ করতে হবে। আমরা দেখলাম, তারা (আওয়ামী লীগ) অনেক অ্যাক্টিভ, তারা অনেক কিছু প্রচার করছে। যেগুলো এই বাংলাদেশের জন্য, বিপ্লবের জন্য, বিদ্রোহের জন্য সম্পূর্ণ উলটো কথা।’
তিনি বলেন, ‘আপনাকে জনগণের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে কথার যুদ্ধে যেতে হবে। কথাগুলো হবে গণমাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মূলধারার গণমাধ্যমের ভাইয়েরা আগে কথা বলতে পারতেন না, এখন পারছেন। তারপরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, যেটা সবচেয়ে বেশি চলে, সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। দরকার আছে… মাঠ দখল করতে হবে, রাস্তা দখল করতে হবে। রাস্তাতে আপনার প্রাণও দিতে হবে গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য। সবই ঠিক আছে। সব শেষে মেধারও চর্চা করতে হবে। জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতি যদি আমরা না করি, তাহলে এই পৃথিবীতে আমরা জিততে পারব না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা তো ১৫ বছর লড়াই করেছি, তাই না? এই ছেলেরা কী অলৌকিক শক্তি পেল, তারা দুই মাসের মধ্যে একটা বিজয় অর্জন করে ফেলল? তাদের হাতে কী ছিল? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। একটাই শক্তি ছিল তাদের কথা, তাদের লেখা। এটা আপনাদেরকেও অর্জন করতে হবে। তরুণদেরকেই করতে হবে। এই তরুণেরাই সব কিছু বদলায়। তারা সমাজ বদলে দিতে পারে, তারা দেশ বদলে দিতে পারে। তাদের সেই শক্তি আপনাদের অর্জন করা দরকার।’
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. মঈন খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমার রহমান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়রে শিক্ষক ড. মাহবুব উল্লাহ প্রমুখ।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ