নিজস্ব প্রতিবেদক : কাগজে কলমে আসামি একজন। তবে আদালতের চোখ ফাঁকি দিয়ে জামিন আবেদন বা আত্মসমর্পণ করার সময় কাগজ জালিয়াতি করে আসামি সেজে যান আরেকজন।আর নানা প্রলোভনে কারাভোগ করেন নকল আসামিরা।
সংশ্লিষ্ট পক্ষের যোগসাজশে কারাভোগ বাবদ নকল আসামিরা মামলার আসল আসামির সাথে কখনো টাকা পয়সা, কখনো চাকরি বা কখনো নানা চুক্তিতে আবদ্ধ হন।
বিগত সময়ে যখন কারাগারে কয়েদীদের আঙুলের ছাপ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না, তখন আসল আসামির হয়ে নকল আসামির কারাভোগ বাণিজ্য হয়েছে দেদার। তবে চট্টগ্রাম কারাগারে কয়েদীদের আঙুল ছাপ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালুর পর এ বাণিজ্য আস্তে আস্তে বন্ধ হতে চলেছে।
চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম কারাগারে ধরা পড়া এক নকল আসামির কারাভোগ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এর জন্য আদালত নকল আসামিকে গ্রেফতারসহ সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর কাছেও ব্যাখ্যা চেয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার বারইয়ারহাট এলাকার লোহা ব্যবসায়ী মো. জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে একটি প্রতারণা মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় আক্তার হোসেন, নাজমুল হোসেন ও নবিজ উদ্দিনকে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, জসিমের দোকানে মাল পাঠানোর কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে তাঁর কাছ থেকে চার লাখ টাকা নেন আসামিরা। তদন্ত শেষে পুলিশ এই মামলায় আদালতে গত বছরের ১১ জানুয়ারি অভিযোগপত্র দেয়। পরে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন আসামি নবিজ উদ্দিন। তবে সেদিন কাগজে নবিজের নাম থাকলেও বাস্তবে গিয়েছিলেন আজির উদ্দীন। আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু চট্টগ্রাম কারাগারে যাওয়ার পর আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে ধরা পড়ে প্রতারণার মামলায় নবিজ উদ্দীন হয়ে কারাগারে আসা বন্দী আসলে আরেকজন। তার নাম আজির উদ্দীন।
২৭ জানুয়ারি নকল আসামি আজির উদ্দীনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করানো হয়। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হকের আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে আজির উদ্দীন বলেন, আমি নারায়ণগঞ্জে একটি রোলিং মিলে চাকরি করতাম। নারায়ণগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামে কাজের (চাকরি) কথা বলে আমাকে নিয়ে আসেন নাজমুল হোসেন। পরে আদালতের বারান্দায় দাঁড়াতে বলেন। এরপর পুলিশ আমাকে কারাগারে নিয়ে যায়। নাজমুলের সঙ্গে আমার পরিচয় রয়েছে। তিনি আমার জেলা কুড়িগ্রামের বালাপাড়ার বাসিন্দা।
এ ঘটনায় চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হক বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আজির উদ্দীনের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা করেছেন। এ মামলায় আজিরকে কারাগারে পাঠান আদালত। একই আদেশে যার হয়ে আজির কারাভোগ করেছেন সেই নাজমুলের বিরুদ্ধেও পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, সত্যায়িত জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কোনো আসামির ওকালতনামা না দিতে আইনজীবীদেরকে অনুরোধ করা আছে। তবে ভুল ত্রুটি হয়ে যেতে পারে। আইনজীবীরা নানা কাজে ব্যস্ত সময় কাটান। কেউ যাতে প্রতারণার সুযোগ না পান আইনজীবীদেরকে সে বিষয়ে আরও সতর্ক থাকতে হবে।
চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/এসএ