চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: সুন্নতে খাতনা করাতে গিয়ে রাজধানীর বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আইওয়াশ (লোক দেখানো) ও হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালত বলেন, দায় এড়ানোর জন্যই তারা এ ধরনের রিপোর্ট দাখিল করেছে। শিশু আয়ানের অ্যাজমা সমস্যা থাকার কথা জানার পরও কেন চিকিৎসকরা অপারেশনের জন্য এতো তাড়াহুড়া করলেন? শিশু আয়ানের সুন্নতে খাতনা করার সময় যে পরিমাণ ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে, হার্টের বাইপাসেও এতো ওষুধ লাগে না বলে মন্তব্য করেন আদালত। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।
প্রতিবেদনটি আদালতে তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ। রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম।
এর আগে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দাখিল করা সুন্নতে খাতনা করাতে গিয়ে রাজধানীর বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির মতামত অংশে বলা হয়েছে, ৫ বছর ৮ মাস বয়সী আয়ানের ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা (হাঁপানি) ছিল। এই বয়সে অটো পিক বা এ্যালার্জিক অ্যাজমা হয়ে থাকে। ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা এ্যালার্জেন (অতি সংবেদনশীলকারক) দিয়ে হয়।
অস্ত্রোপচারের আগে আয়ানকে এনেসথেসিয়া বা সংবেদনহীন করতে প্রয়োগ করা ইনজেকশন প্রোফোফল মারাত্মক এলার্জি প্রতিক্রিয়া (অ্যানাফিল্যাকটয়েড রিা্যাকশন) সৃষ্টি করতে পারে। যা শ্বাসতন্ত্র সংকুচিত হয়ে (ল্যারিঙ্গো স্পাজম) বা (ব্রঙ্কোস্পাজম ) শ্বাসনালীর আশপাশের পেশি শক্ত হয়ে খিঁচুনি হয়ে থাকতে পারে। যা এনেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ম্যানেজ করেছেন।
চার নম্বর মতামতে বলা হয়েছে, সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) এবং ওষুধ দিয়ে (মেডিকেশন) দিয়ে আয়ানের হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনতে ১০ মিনিটের মত সময় লেগেছিল। যার কারণে হাইপক্সিক ব্রেইন ইনজুরি (মস্তিস্কে অক্সিজেন প্রবাহ বন্ধ হয়ে মৃত্যু) হয়ে আয়ানের মৃত্যু হতে পারে। তখন সিটি স্কেন বা ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাম -ইসিজি করলে হাইপক্সিক ব্রেইন ইনজুরি হয়েছিল কিনা তা জানা যেত।
তাছাড়া সিপিআর কারণে (রিব ফ্রেকচার) পাঁজরের হাড়ও ভেঙে যেতে পারে বলে ধারণার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। সিপিআর একটি জীবনদায়ী পদ্ধতি। মানুষের হৃদ্যন্ত্র ও শ্বাসযন্ত্রের কাজ বন্ধ হয়ে গেলে, দুই হাতে বুকে চাপ দিয়ে শরীরে রক্ত ও অক্সিজেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আয়ান চাইল্ডহুড অ্যাজমা সমস্যায় ভুগছিল। শ্বাসকষ্টের জন্য আয়ানকে মাঝে মাঝে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেয়া লাগতো। সুন্নতে খাতনার অপারেশনের আগে ওয়েটিং রুমে তাকে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেয়া হয়েছিল। এ বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি। প্রতিবেদনের মতামত অংশে আরও বলা হয়, শিশু আয়ানের অপারেশনের সময় স্বাভাবিক রক্তপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
চাটগাঁ নিউজ/এমআর