নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বেশিরভাগ সময় উত্তাল থাকে চট্টগ্রামের শিক্ষাঙ্গন ও দলীয় রাজনীতির মাঠ। কিন্তু দুই পক্ষের কর্মীদের মধ্যে সাপে নেউলে সম্পর্ক থাকলেও সম্প্রতি এই দুই নেতার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখা গিয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে চট্টগ্রামের এই দুই নেতাকে খোশমেজাজে একসাথে সভা-সমাবেশ করতে দেখা গেছে। এই যেন দুই নেতার মাঝে রাজনৈতিক শিষ্ঠাচারের বহিঃপ্রকাশ। এইবার এই দুই নেতার বৈরিতা সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন খোদ দুই নেতাই।
শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের মধ্যে নানা গ্রুপিং বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে উপাচার্যের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন আ জ ম নাছির উদ্দীন ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল দুইজনেই।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে জামালখানের চট্টগ্রাম সিনিয়র’স ক্লাবে আয়োজিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এর নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় মঞ্চে উপস্থিত শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল ও আ জ ম নাছিরকে উদ্দেশ্য করে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন – চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কয়েকদিন পরপর অস্থির হয়ে উঠে। যারা অস্থির করে তুলে তাদের সাথে বার বার নাম জড়িয়ে যায় আপনাদের দুইজনের। আপনাদের যে সহাবস্থান বা সৌহার্দ্যপূর্ন সম্পর্ক এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি তার প্রভাব নেতাকর্মীদের মধ্যে পরে কিনা?
এর উত্তরে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রুপিং এর নামে যে সংঘাত গুলো হচ্ছে, এগুলো মূলত পাস করে যাওয়া ছাত্রত্ববিহীন শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে সেখানে থাকার কারনে হচ্ছে। যারা মূলত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর বহিরাগত বলেই স্বীকৃত। তারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্রভাবে সংগঠিত হয়ে বেনামি নামে দল পাকিয়ে কিছুক্ষণ উনার (আ জ ম নাছির) নাম কিছুক্ষণ আমার নাম নিচ্ছে এবং একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়াচ্ছে। সেইসাথে সাধারণ শিক্ষার্থীদের টিজিং, বুলিং এবং র্যাগিং এর মাধ্যমে সেটাকে রাজনৈতিক রূপ দিচ্ছে। এমন ঘটনাও আমি শুনেছি, যেখানে সিনিয়রদের সামনে কেনো শার্টের হাতা তুলে রাখা হলো তা নিয়েও মারামারি লেগে গেছে। এগুলো মোটেও কাম্য নয়। জিনিসটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। এরকম রাজনৈতিক সংঘাত গুলো সুচারু ও পরিকল্পিতভাবে সেসব শিক্ষার্থীরাই করছে, যারা শিক্ষার আশেপাশে না থেকেও দল পাকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছে।
এসময় শিক্ষা উপমন্ত্রী যোগ করেন, আমরা উপাচার্য মহোদয় কে বলেছি এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে। বিশেষ করে যারা ১০ বছরেও গ্রেজুয়েশন সম্পন্ন করতে পারে নাই কিংবা ৫ বছরেও পোস্ট গ্রেজুয়েশন সম্পন্ন করতে পারে নাই তাদেরকে যেন হল থেকে পাঠিয়ে দেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রীর বিবৃতির সাথে একাত্মতা পোষণ করে আ. জ. ম নাছির উদ্দীন জানায়, আসলে উনার (শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল) বক্তব্যের সাথে আমি পুরোপুরিভাবে একমত। পাশাপাশি আমি একটু যোগ করতে চাই, তা হলো আমি নিজেও অনেকবার ভিসি মহোদয়কে এই বিষয়ে বলেছি এমনকি জেলা পুলিশ সুপারসহ সবাইকেই বলেছি। আর যে বিরোধগুলো হয় এবং যে নেগেটিভ সংবাদগুলো আপনাদের মাধ্যমে আসে এগুলোর বিন্দু পরিমাণ সত্যতা এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুটি গ্রুপে বিভক্ত। প্রতিটি গ্রুপের আবার রয়েছে বিভিন্ন উপগ্রুপ। এর মধ্যে একটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা নিজেদের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেন। অন্যটির নেতাকর্মীরা আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।
দুই পক্ষের অনুসারীরা আবার শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক একাধিক গ্রুপে বিভক্ত। এসব গ্রুপ পরস্পরের মধ্যে নিয়মিত সংঘর্ষে জড়ায়। একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।