নিজস্ব প্রতিবেদক : উত্তাল জুলাইয়ের ১৮ তারিখ। মুরাদপুর-শুলকবহর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিল চলছে। এই মিছিলের উপর চলছে পুলিশের মুহুর্মুহু গুলি, টিয়ার শেল নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ। প্রাণ বাঁচাতে আন্দোলনের মাঝে পড়ে যাওয়া শত শত মানুষ, যানবাহন যে যেদিকে পারে ছুটছে। প্রাণ বাঁচাতে রিকশাচালক লিটন দত্ত নিকটবর্তী গ্যারেজে তার রিকশাটি রেখে বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটা দেন। এই সময় এক পথচারীর সাথে ধাক্কা খেয়ে লিটন পড়ে যান রাস্তায়। তখন পিছন দিক থেকে ছুটে আসা একটি মোটরসাইকেল লিটনের পা চাপা দিয়ে চলে যায়। এই দুর্ঘটনায় তার পা ভেঙে যায়। হাসপাতালে কিছুদিন চিকিৎসা করানো হলেও এখনো লিটনের পায়ের কোন উন্নতি নেই। গত তিনমাস ধরে চিকিৎসাবিহীন মানবেতর জীবন কাটালেও লিটন দত্তের খবর কেউ রাখেনি।
এই লিটন দত্তকে নিয়ে মর্মস্পর্শী একটি সংবাদ প্রচার করে জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম সিপ্লাসটিভি। সিপ্লাসটিভির নিউজের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের দৃষ্টিগোচর হলে তারা লিটনের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়।
এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলার স্বাস্থ্য বিষয়ক উপকমিটির প্রতিনিধি মোহাম্মদ এনামুল হক চাটগাঁ নিউজকে বলেন, রিকশাচালক লিটন দত্তের খবর আমরা এতদিন জানতে পারিনি। আসলে এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অনেক সাধারণ মানুষও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে নানামুখী কারণে আমরা অনেকেরই খোঁজ খবর নিতে পারেনি। লিটন দত্তের বিষয়টি আমরা সিপ্লাসটিভির মাধ্যমে জানতে পারি। আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে লিটন দত্তের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। আন্দোলনে আহতদের ব্যাপারে সাংগঠনিকভাবে তড়িৎ ব্যবস্থা নিচ্ছি।
আহত লিটন দত্তের স্ত্রীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, তাদের দুই সন্তান। স্বামী পরিবারের একমাত্র আয়ের মাধ্যম ছিল। কিন্তু তিনি পঙ্গু হয়ে বর্তমানে ঘরে বসা। তারা একবেলা খেলে আরেক বেলা উপোস থাকেন। কোন কোন দিন সন্তানদের মুখে দুমুঠো ভাত দিতে গিয়ে তারা নিজেরাই উপোস থাকেন। এভাবেই চলছে তাদের জীবন। তিনি একটি পোষাক কারখানায় চাকরি করতেন। কিন্তু স্বামীর দেখাশোনার জন্য চাকরিতেও ঠিকভাবে যেতে পারছেন না। বর্তমানে অর্থের অভাবে স্বামীর চিকিৎসাও প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে। তবে বৈষম্যবিরোধীর নেতারা তাদেরকে দেখতে এসেছেন। উনারা স্বামীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানান লিটনের স্ত্রী।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ