আনোয়ারা প্রতিনিধি : আবারো ভাঙনের কবলে আনোয়ারা উপকূলের বেড়িবাঁধ। টানা বৃষ্টি, সাগরের উত্তাল ঢেউ, নির্মাণ কাজে অনিয়মসহ নানা কারণে উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা বাইগ্যার ঘাট, পূর্বগহিরা ফকির হাট ও দক্ষিণ সরেঙ্গা এলাকায় বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশে ভাঙন ধরেছে। ফলে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে উপকূলের ৫০ হাজার মানুষ। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে গহিরা বাইগ্যার ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সাগরের ঢেউয়ে বেড়িবাঁধের প্রায় অংশ ভেঙে গেছে। পাশের মসজিদে পানি উঠানামা করছে, বিলিন হয়ে গেছে কবরস্থান।
জানা যায়, এক সপ্তাহের বৃষ্টি ও উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে আনোয়ারা রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা ও সরেঙ্গা উপকূলের বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। জরুরি ব্যবস্থা না নিলে প্লাবিত হবে পুরো ইউনিয়ন। এছাড়া জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বারখাইন ইউনিয়নের তৈলারদ্বীপ এলাকায় পানিতে ভাসছে ঘরবাড়ি ও মৎস্য খামার। এছাড়া জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের রব্বাত মিয়াজির বাড়ী থেকে হাজি বাজারসহ তিন কিলোমিটার বাঁধ ও ফসলি জমি তীব্র ভাঙনের মুখে রয়েছে।
এতে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারাচ্ছে শত শত মানুষ। ভাঙন ঠেকাতে কিছু দিন আগে জিও ব্যাগ দিলেও সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে তা তলিয়ে যায়। দ্রুত বেড়িবাঁধ সংস্কার না হলে বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হবে পুরো জুঁইদন্ডী ইউনিয়ন- এমনটা ধারণা করছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারা উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে ২০১৮ সালে সরকার ৩২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের উন্নয়নে ৫৭৭ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু করে। এতে রায়পুর ইউনিয়নের ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে পাথর বসানো হয়। বাকি ৫ কিলোমিটার এলাকায় মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এই ৫ কিলোমিটারের মধ্যে গহিরা সাগর উপকূলে ২ হাজার ৭৭৫ মিটার ও সরেঙ্গা শঙ্খ নদীর ২ হাজার ৪০০ মিটার রয়েছে। এই ৫ কিলোমিটারের জন্য নতুন করে ৩০০ কোটি টাকার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় বাইগ্যার ঘাট এলাকার বাসিন্দা মো. ওসমান গনি বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণ হলেও আমাদের বাড়িঘরের পাশে এখনো পাথর বসানো হয়নি। এই ঘাটের দুইপাশে পাথর বসানো হলেও মাঝখানে পাথর না দেওয়ায় বারবার ভাঙনের কবলে পড়ে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এবার বাড়িঘর ছেড়ে যেতে হবে।
মো. রাসেল নামের এক যুবক বলেন, দুই-তিনদিনের জোয়ারের পানিতে কবরস্থান বিলিন হয়ে গেছে। মসজিদেও পানি উঠানামা করছে, নামাজ পড়া যাচ্ছেনা।
চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহিদ বলেন, রায়পুর ইউনিয়নের ৫ হাজার ১৭৫ মিটার বেড়িবাঁধে ব্লক বসানোর জন্য নতুন করে ৩৯৯ কোটি টাকার প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে জরুরি মেরামতেরও সম্ভব হচ্ছে না। এখন ঠিকাদাররা কোথাও কাজ করছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাটগাঁ নিউজ/সাজ্জাদ/এসএ