আনোয়ারা প্রতিনিধি : স্ত্রীকে টানেল দেখাতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে চট্টগ্রামের আনোয়ারার দেয়াং পাহাড়ে নিয়ে আমেনা বেগম (৩৫) নামে গৃহবধূকে খুন করে স্বামী বিদেশ পালানোর ঘটনায় সরাসরি জড়িত দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া স্ত্রীকে খুন করতে স্বামীকে সহায়তা করেছিল স্বামীর এক বন্ধু যিনি পুলিশ কনস্টেবল পদে কর্মরত। আর এ খুনের নেপথ্য ঘটনার রহস্য উম্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট।
চট্টগ্রাম ও পার্বত্য এলাকা খাগড়াছড়ি এবং বাঘাইছড়ির বিভিন্ন এলাকায় টানা ৭২ ঘন্টার অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ দিদারুল ফেরদৌস। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃতদের বয়ানে পুলিশের দেওয়া ঘটনার বর্ণনানুযায়ী খুনের নেপথ্য ঘটনা যেন বলিউডের কোনো থ্রিলার মুভি! যার পরতে পরতে রয়েছে সাসপেনশন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন নগরীর ডবলমুরিং হাজী পাড়া এলাকার মোহাম্মদ সোলতান আহমেদের ছেলে জাহেদ নাবেদ (৩০) প্রকাশ নাহিদ ও আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ মোহাম্মদপুর এলাকার মো. ইরফান (৩২)। গ্রেপ্তারকৃত মো. ইরফান রাঙ্গামাটিতে পুলিশ কনস্টেবলে কর্মরত এবং নাবেদ শহরে ব্যবসা করে।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, গত ৩ অক্টোবর দুপুরে আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের চায়না ইকোনমিক জোন কার্যালয়ের পাশে পরিত্যক্ত একটি ইটভাটা থেকে গৃহবধূ আমেনার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এসময় মরদেহের কিছু অংশ শেয়াল বা কুকুরে খেয়ে ফেলায় এবং পচে যাওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় পিবিআইয়ের ক্রাইম সিন ইউনিটকে পরিচয় শনাক্তের ভার দেওয়া হয়। এক দিনের মাথায় পরিচয় শনাক্তের পর পিবিআই জানিয়েছে, উদ্ধার করা মরদেহটি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার নাগেরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা কামাল উদ্দিনের মেয়ে আমেনা বেগমের(৩৫)।
দুবাই প্রবাসী কুমিল্লার বাসিন্দা ইয়াসিন আরাফাতের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে হয়। সেই সংসারে একটি সন্তান রয়েছে। তার আগের সংসারেও দুই সন্তান ছিল। কিন্তু ইয়াসিনের পরিবার আমেনাকে মেনে নেয়নি। এ কারণে স্ত্রীকে ইয়াছিন নগরের বাকলিয়া তক্তারপুল এলাকায় ভাড়া বাসায় রাখতেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্য ও পুলিশ সূত্র আরও জানায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর আমেনার স্বামী ইয়াসিন আরাফাত ফোন করে আগ্রাবাদের বন্ধু নাহিদ কে জানান সে দুবাই থেকে আসছে, পার্টি করবে। পরে ইয়াসিনের সাথে তার আরেক বন্ধু ইরফানসহ আগ্রাবাদে আসে। সেখান থেকে রাতে সিএনজি করে আনোয়ারায় ইরফানের বাড়িতে যান। তারপর তারা সেখানে ইয়াবা ও মদ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
পর দিন ১ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে ইয়াসিনের স্ত্রী আমেনা তাকে ফোন করেন। তার একটু পর ইয়াসিন ও ইরফান আরেক বন্ধুর গাড়িতে করে নগরীর কালামিয়া বাজার যান। তখন নাহিদ ইরফানের বাড়িতেই ছিলেন। রাত সাড়ে ১২ টার দিকে আমেনাসহ দুজন আবার ইরফানের বাসায় ফিরে যান। পরে চার জন মিলে এক সাথে ইয়াবা ও মদ সেবন করেন। রাত ৩ টার দিকে তারা প্ল্যান করেন গাড়ি নিয়ে টানেলে ঘুরতে বের হবেন। বের হয়েই তারা সিদ্ধান্ত নেন পাহাড়ে বসে মদ খাবে। ইরফান তাদের দেয়াং পাহাড়ে নিয়ে যান।
সেখানে যাবার পরপরই ইয়াসিন ও তার স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে হঠাৎ ইরফান আমেনার পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। পরে ইয়াসিন কোমর থেকে একটি ছুরি বের করে আমেনার পেটে ডুকিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর আমেনার মৃত্যু হলে তিনজনে মিলে নিহতের কাপড় কেটে নালার মধ্যে লাশ ফেলে দেয়। তারপর সেখান থেকে তিনজন ইয়াসিনের খালাতো ভাইয়ের বাসায় গিয়ে যে যার মতো চলে যান। সঙ্গত কারণে ঘটনায় জড়িত কয়েক জনের নাম স্পষ্ট করে জানায়নি পুলিশ।
তবে পুলিশ আরও জানায়, স্ত্রীকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের চায়না ইকোনমিক জোন পাহাড় রেখে গত ৩ অক্টোবর ইয়াসিন পুনরায় দুবাই চলে যান।
নিহত আমেনার পিতা কামাল উদ্দিন বলেন, আমার মেয়েকে বেড়ানোর কথা বলে আনোয়ারায় নিয়ে যায় তার স্বামী। সেখানেই আমার মেয়েকে তার স্বামী খুন করেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আমরা শনিবার আনোয়ারার পাহাড় থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করেছি। দুইজনকে গ্রেপ্তারের পর অনেক তথ্য বের হয়ে আসে। গ্রেপ্তারকৃতরা সবকিছু স্বীকার করেছে।
চাটগাঁ নিউজ/সাজ্জাদ/জেএইচ