চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। বাংলার ইতিহাসে এক দুর্ভাগা চরিত্র। নানা ষড়যন্ত্র আর কূটকৌশলের চালে চালে এই দুর্ভাগা মানুষটিকে চালাতে হয়েছিল বাংলার মসনদ। কোনো পরাশক্তির আক্রমণ তাঁকে দমাতে পারেনি। মীরজাফর,ঘষেটি বেগমদের প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের যাঁতাকলে পড়ে এই নবাবের করুণ মৃত্যু হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। বাংলার ক্ষমতা চলে গিয়েছিল ব্রিটিশদের হাতে। সিরাজ জীবদ্দশাতে শান্তিতে ছিলেন না। শান্তিতে মৃত্যুবরণও করতে পারেননি। আবার অনাদরে অবহেলায় তাঁর কবরটিও আজ বিলীন হওয়ার পথে। অথচ নবাব সিরাজউদ্দৌলা মানে দেশপ্রেম, সিরাজউদ্দৌলা মানে দ্রোহের আগুনে জ্বলে উঠা এক ক্ষুব্ধ বিপ্লবীর জীবনগাঁথা।
আর মীরজাফর, যার অপকৌশলে গদিচ্যুত হয়েছিলেন সিরাজ। যার চক্রান্তে বাংলা,বিহার,উড়িষ্যার স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছিল ব্রিটিশরা। যে ‘মীরজাফর’ শব্দটি আজ মানুষের কাছে বেঈমান,মোনাফেক অর্থে ব্যবহৃত হয়। সেই মীরজাফরের কবরস্থান সম্মানিত হচ্ছে পরম যত্ন আর আদরে।
বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ আর বাংলার বেঈমান মীরফাফর। দুই সমাধিস্থলের এই বৈপরীত্য যেন ইতিহাসের অবিচারকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
জানা যায়, ভারতের মুর্শিদাবাদের খোশবাগে শায়িত রয়েছেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। এই নবাবের পবিত্র কবরস্থানটি অপরিকল্পিত ও অবহেলায় জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। নবাবের কবরস্থানের এমন হতশ্রী অবস্থা বাংলার গৌরবময় ইতিহাসকে আরও মলিন করে তুলেছে। নবারের কবর দর্শন বা জেয়ারত করতে যাওয়াও এক কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
সম্প্রতি ভারত ভ্রমণ শেষে দেশে আসা মো. আরমান জানান, নবাব সিরাজউদ্দৌলার কবর দেখতে যেতে হলে অনেক কষ্ট করতে হয়। খোশবাগে যেতে হলে নৌকায় করে ভাগীরথী নদী পেরুতে হয়। তারপর ওই পাড়ে উঠে শ্যালোমেশিন চালিত ভ্যানগাড়ি ভাড়া করতে হয়। এক কথায় দুর্গম এক অঞ্চল। সাধারণতা নবাবের কবর বলতে আমাদের মনে একটা রাজকীয় কবরের চিত্র অংকিত ছিল। কিন্তু সিরাজউদ্দৌলার কবরটি চোখে পড়া মাত্রই যেন নিজেকেই চরম লজ্জিত মনে হল। কবরটির চারপাশে নেই কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা। খোলা উন্মুক্ত স্থানে নবাবের পবিত্র কবরটি খুঁজে নিতে যেন হাতড়াতেই হচ্ছে। নেই কোন নির্ধারিত তত্ত্বাবধান। একেবারে সাদামাটা নেই কোনো আভিজাত্য বা ঐতিহাসিক মর্যাদার চিহ্ন। এই সমাধিস্থল দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের।
তিনি আরো বলেন, মুর্শিদাবাদের জাফরগঞ্জে শায়িত রয়েছেন ঘৃণিত চরিত্র মীরজাফর। তাঁর কবরস্থানটি রাজকীয় আভিজাত্যে ভরপুর। মীরজাফরের কবর ঝকঝকে মার্বেল পাথরে নির্মিত।
কবরস্থানের পরিচ্ছন্নতা ও পরিকাঠামো মীরজাফরের বংশধরের প্রভাবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কবরস্থানে রয়েছে সুরক্ষিত গেইট, নিরাপত্তারক্ষী এবং গাইডের ব্যবস্থা। মীরফাফর ও তাঁর ১১০০ বংশধরদের কবর দেখতে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা পাঁচ টাকার টিকিট কাটতে হয়। গাইডের জন্য ৫০ টাকা দিয়ে তাঁদের ইতিহাস শোনার সুযোগও মেলে।
অথচ নবার সিরাজউদ্দৌলার সমাধিস্থল থেকে কিছুটা দূরে শায়িত তাঁর বংশধররা। পবিত্র এ কবরগুলোও পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়। গাইড ছাড়া কোনো লোকের পক্ষে সেগুলো চিহ্নিত করা দুষ্কর।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি