নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী গত সোমবার থেকে ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে গেছেন। যার নির্দেশে কর্ণফুলীতে বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের নামে এক ডজন মামলা দিয়েছিলো তিনি আজ অসহায়। যেকোন মুহুর্তে তিনি বিদেশ পাড়ি দিতে পারেন বলে সুত্রের দাবি।
কর্ণফুলীতে তার একক ইশরায় গত ৭ বছরে প্রকল্পে লুটপাট, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের রদবদলসহ নানা দুর্নীতি ও অনিয়ম ছিলো চোখে পড়ার মতো। এমন কি ফারুক চৌধুরীর একক দাপটে ইউএনও এসিল্যাণ্ডও অসহায় ছিলেন। গত ৬ বছরে ৮ জন ইউএনও পরিবর্তন করতে হয়েছে।
তার কারণে কর্ণফুলীতে বিএনপি জামায়াতের কয়েকশ নেতাকর্মী ঘর ছাড়া ছিলেন। বড়উঠানের একাধিক বিএনপি নেতা জামিন নিয়ে ঘরে ফিরেছে শোনে আওয়ামী লীগের এই প্রতাপশালী নেতা আত্মগোপনে চলে গেছেন। নেতাদের সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ করছেন না।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছেন, ফারুক চৌধুরী গত রোববারে পরিবার নিয়ে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইমিগ্রেশন পুলিশ এসবি তাকে ফেরৎ পাঠিয়েছেন। অনেকেই বলছেন তিনি ঢাকা এলিফ্যান্ড রোডে অবস্থান করেছেন। আবার অনেকেই বলছেন তিনি কর্ণফুলীর বড়উঠানের এক আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপনে রয়েছেন।
ওদিকে, ছাত্র-জনতার জনরোষে শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর চলমান পরিস্থিতিতে আত্মগোপনে চলে গেছেন কর্ণফুলী আরেক প্রভাবশালী নেতা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল ইসলাম চৌধুরী ও কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আমির আহমদও।
এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান তালুকদার, সহ সভাপতি এসএম হোসেন, মোহাম্মদ ইসমাইল, হাজী ছাবের আহম্মেদ চেয়ারম্যান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিউল কবির লিটু, সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুর রহমান মিলন, মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বাবু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জালাল আহম্মদ, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নুর আহম্মদ, কোষাধ্যক্ষ আবদুল করিম ফোরকানসহ অনেক নেতাকর্মী আত্মগোপনে রয়েছেন।
এদিকে, সারাদেশের মতো কর্ণফুলীতেও আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক চৌধুরী, যুবলীগ সভাপতি দিদারুল ইসলাম চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মন্নান, মো. সেলিম, আবছার, জাহাঙ্গীর ও নেভী হারুনের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে কোন নেতাকর্মী এ সময় বাড়িতে ছিলেন না। হামলা-মামলার ভয়ে আত্মীয়-স্বজনের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে।
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরে দাঁড়াচ্ছেন—গত সোমবার দুপুরে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়। সেদিন বিকেল পর্যন্ত নেতাদের মোবাইল খোলা থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে বন্ধ পাওয়া যায় অনেকের ফোন।
কর্ণফুলী আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি হতে পারে সেটা ৫ বছর ধরেই বুঝতে ছিলাম। কিন্তু আমরা তো সভাপতি ফারুক চৌধুরীর কাছে অসহায় ছিলাম। তিনি কর্ণফুলীতে উন্নয়নের নামে সরকারি কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে কানাডা পাচার করেছেন। ঢাকায় ব্যবসা গুছিয়েছেন। ব্যাংকের লোন পরিশোধ করেছেন। অর্ধ শত কোটি কোটি টাকা বানিয়ে সে আজ পলাতক। তার পরিবারের কেউ কর্ণফুলীতেও থাকেন না। ঢাকায় থাকেন। ভোটার ও ঢাকাতে তারা।’
কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে সকালে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ফারুক চৌধুরী অজ্ঞাত স্থান থেকে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন। যা হুবহু পাঠকের প্রয়োজনে তুলে ধরা হলো।
“প্রিয় সহকর্মী, সবাই কেমন আছেন বা আছ সেটা প্রশ্ন করে বিব্রত করতে চাই না। এই মুহুর্তে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন ধৈর্য্য-সহ্যের সাথে সময়ের মোকাবেলা করা। আমি কর্ণফুলীতে আমাদের দলের বাহিরে যাঁরাই নেতৃত্বে আছেন তাদের সাথে কথা বলেছি, তারা যদি কোন কারণে সংক্ষুদ্ধ হয়। আমার বাড়ীতে একবার আক্রমন করেছে যদিও তখন আমি ঘরের ভেতর ছিলাম। এই রকম হাজার বার আক্রমণ করুক আমার আপত্তি নেই। দয়া করে আল্লাহর ওয়াস্তে আমাদের কোন নেতাকর্মী বা বাড়ী ঘরে আক্রমণ করবেন না।”
“আমি উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সভাপতি হওয়ার পর থেকে বারবার চেষ্টা করেছি কর্ণফুলীতে সকলের সহবস্থান নিশ্চিত করতে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছি সেই দায়ভার আমার। নিতান্তই আমার। কোন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ এর নেতা-কর্মীর না। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বড়উঠান এবং দক্ষিণ শিকলবাহায় যাহা ঘটেছে বা যেখানে যা ঘটেছে কোনটাই তাদের জ্ঞ্যাতসারে ঘটেনি।”
তিনি আরো লিখেছেন, “রাজনীতির হাতেকড়ি পারিবারিক ভাবে। বাবা শেখ সাহেব তথা বঙ্গবন্ধুর অনুসারী সেই হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর রিলিফ কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন ।১৯৭৯ সালে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্বে আসা সাধারন সম্পাদক এসএম হোসেন । (১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৮১ সালে নেত্রী দেশে আসার আগে) সুতরাং উত্তান-পতন কম তো দেখা হয়নি। আপনারা সকলে ভাল থাকুন-ফি আমানিল্লাহ্। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।”
চাটগাঁ নিউজ/এআইকে/এসআইএস