চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : আজ পবিত্র হজ। আরাফাত ময়দানে থাকার দিন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার ময়দানে আজ শনিবার (১৫ জুন) অবস্থান করবেন সারা বিশ্ব থেকে জড়ো হওয়া লাখ লাখ মুসল্লি। আরাফার ময়দানে অবস্থান করাই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা।
লাখো মুসল্লির কণ্ঠে আরাফার ময়দানে আজ ধ্বনিত হবে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।
পবিত্র হজ মহান আল্লাহর একটি বিশেষ বিধান। হজ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘ইচ্ছা করা’। হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান সব মুসলমান পুরুষ ও নারীর ওপর হজ ফরজ। জিলহজ মাসের নির্দিষ্ট দিনে (মূলত ৯ জিলহজ) হজের নিয়তসহ ইহরাম পরিধান করে আরাফার ময়দানে অবস্থান করা এবং পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করা।
আরাফাত ময়দানে উপস্থিত হওয়া হজের অন্যতম ফরজ। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহর কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর প্রকৃত হজের পুরস্কার জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়।’ (বুখারি: ১/২০৬)
আজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সব হাজি আরাফাত ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকেন। আরাফাত ময়দানে অবস্থানের প্রতিদানস্বরূপ আল্লাহ হাজিদের নিষ্পাপ ঘোষণা করেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘আরাফাত দিন আল্লাহ এত অধিক পরিমাণ জাহান্নামিকে অগ্নি থেকে মুক্তি দেন, যা অন্য কোনো দিবসে দেন না।’ (মুসলিম)
আরাফাত ময়দানে মসজিদে নামিরাহ থেকে আজ হজের খুতবা দেওয়া হবে। মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে আরাফাত ময়দান। আজ আরাফাত ময়দানে খুতবার পর জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন হাজিরা। তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে মুজদালিফায় (আরাফাত ময়দান থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে) গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। রাতে সেখানে অবস্থান করবেন খোলা মাঠে এবং শয়তানের প্রতিকৃতিতে নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় পাথর সংগ্রহ করবেন।
মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায় করে হাজিরা কেউ ট্রেনে, কেউ গাড়িতে, কেউ হেঁটে মিনায় যাবেন এবং নিজ নিজ তাঁবুতে ফিরবেন। মিনায় বড় শয়তানকে সাতটি পাথর মারার পর পশু কোরবানি দিয়ে মাথার চুল ছেঁটে গোসল করবেন। সেলাইবিহীন দুই টুকরা কাপড় বদল করবেন। এরপর স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। মসজিদুল হারাম সম্প্রসারণের ফলে এখন প্রতি ঘণ্টায় ১ লাখ ৭ হাজার মানুষ তাওয়াফ করতে পারেন।
কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় ‘সাঈ’ (সাতবার দৌড়াবেন) করবেন হাজিরা। সেখান থেকে তারা আবার মিনায় যাবেন। মিনায় যত দিন থাকবেন, তত দিন তিনটি (বড়, মধ্যম, ছোট) শয়তানকে ২১টি পাথর মারবেন। আবার মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফ করার পর নিজ নিজ দেশে ফিরবেন।
ভাষা, বর্ণ ও লিঙ্গের ভেদাভেদ ভুলে বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশের ১৫ লাখের বেশি ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালনের লক্ষ্যে এখন সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ থেকে এবার হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে গেছেন ৮৫ হাজার ১২৯ জন।
পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। এদের মধ্যে ১৪ জনই পুরুষ। আর একজন নারী।
এবার হজযাত্রীরা তীব্র গরমে কষ্ট পাচ্ছেন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে আগেই সতর্ক বার্তা পাঠিয়েছে। সেই মেসেজে বলা হয়েছে, দেশটির তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। সবাইকে সতর্ক হতে হবে। সেই সঙ্গে অবশ্যই প্রতিদিন কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করতে হবে সবাইকে।
করোনার পর গত বছরই বেশি সংখ্যক মানুষ হজ করার সুযোগ পেয়েছেন। সে বছর ২০ লাখ মানুষ হজ করার কথা থাকলেও ১৮ লাখের বেশি মানুষ হজ আদায় করেছেন।
চলতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২০ লাখের বেশি মানুষ হজে যাওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ১৫ লাখের কিছু বেশি হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন বলে খবর প্রকাশ করেছে সৌদি আরবে সংবাদমাধ্যম।
চাটগাঁ নিউজ/এসআইএস