চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : আষাঢ়ের মধ্যভাগে এসে সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে বর্ষাকালের মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হয়েছে দেশ জুড়ে। গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হয়েছে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায়। বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। বিস্তৃত হয়েছে শক্তিশালী বৃষ্টিবলয়। গতকাল থেকে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে সক্রিয়তা পেয়েছে এ বৃষ্টিমণ্ডল। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর বিভাগের সব জেলায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বেশির ভাগ এলাকার আকাশে সজল সঘন মেঘমালার ঘনঘটা। ভার হয়ে আছে আকাশ।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মাল্লিক বলেন, দেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হওয়ার ফলে আজ শনিবার থেকে আগামী ৬ জুলাই পর্যন্ত টানা অতি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে ভারী বৃষ্টি হলেও বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় গরমের তীব্রতা একই রকম থাকবে।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, অতি ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও বান্দরবন জেলার পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসেরও আশঙ্কা রয়েছে।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বিভিন্ন আবহাওয়া মডেল বিশ্লেষণ করে বলেন, পশ্চিমা লঘুচাপ, বর্ষাকালের মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ ও দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপের কারণে আগামী ৬ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিনই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিভাগের জেলাগুলোর ওপর হালকা থেকে মাঝারি মানের বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। আজ থেকে আগামী ৯ দিনের প্রতিদিনই সারা দেশে গড়ে ১০-৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
অপেক্ষাকৃত সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হতে পারে ১ থেকে ৪ জুলাই। এ ৯ দিন রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে প্রায় প্রতিদিন ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। এতে সিলেট ও রংপুর বিভাগের নদনদীগুলোতে আবারও পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। আজ শনিবার রংপুর ও সিলেটে, আগামীকাল রবিবার রংপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেট, সোমবার রংপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট, মঙ্গলবার সব বিভাগে বর্ষণ হতে পারে। তবে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বুধবার চট্টগ্রাম, বৃহস্পতিবার খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম, শুক্রবার খুলনা, রাজশাহী ও রংপুরে, শনিবার রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে বেশি বারিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম জানিয়েছে, এ বৃষ্টিবলয়ের নাম ‘রিমঝিম’। এটা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকতে পারে ৩০ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত। এই বৃষ্টিবলয় গতকাল চট্টগ্রাম ও বরিশাল দিয়ে বিস্তৃত হয়েছে। আগামী ৭ জুলাই রংপুর হয়ে দেশ ত্যাগ করতে পারে। এ বৃষ্টিবলয় চলাকালীন সময়ে সিলেট, চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগের নিচু এলাকায় সাময়িক বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। রাজশাহী বিভাগের কিছু এলাকায় মৃদু তাপপ্রবাহ সক্রিয় থাকতে পারে এবং কিছুটা ভাপসা গরম অনুভূত হতে পারে। এ সময়ে মেঘের অভিমুখ থাকবে অধিকাংশ এলাকায় দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে ও পরবর্তী সময়ে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে। আগামী সাত দিনে ঢাকায় গড়ে ১৮০-২২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। খুলনা বিভাগে গড়ে ২০০-২৫০ মিলিমিটার, বরিশাল বিভাগে গড়ে ২৫০-৪০০ মিলিমিটার, সিলেট বিভাগে গড়ে ৩৫০-৫০০ মিলিমিটার, ময়মনসিংহ ২৮০-৪০০ মিলিমিটার, রাজশাহী ১৫০-২২০ মিলিমিটার,রংপুর ৩৫০-৪৫০ মিলিমিটার, চট্টগ্রাম ৪০০-৫৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে।
সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার শঙ্কা: গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র পূর্বাভাস দিয়ে জানিয়েছে, দেশে ও উজানে ভারতের রাজ্যগুলোতে বৃষ্টিপাত বেড়ে আগামী তিন দিনে সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আজ শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির সমতল বাড়ছে, যা রবিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তত্সংলগ্ন উজানে আগামী তিন দিনে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এ সময় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীসমূহের পানির সমতল বাড়তে পারে। এ সময়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা, পুরোনো-সুরমা, সারিগোয়াইন নদীর পানির সমতল দ্রুত বেড়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। এদিকে আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত দেওয়া এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানির সমতল স্থিতিশীলভাবে বাড়তে পারে। তবে এ সময়ে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় পানির সমতল বিপদসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা নেই। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীলভাবে বাড়তে পারে। তবে পানির সমতল বিপদসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা নেই। ঢাকার চারপাশের নদীসমূহের পানির সমতলও স্থিতিশীলভাবে বাড়তে পারে। তবে বিপদসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা নেই।
বর্তমানে কুশিয়ারার পানি মারকুলিতে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাউবো জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের পর্যবেক্ষণাধীন ১১০টি স্টেশনের মধ্যে শুক্রবার পানির সমতল বেড়েছে ৪৭টিতে, কমেছে ৫৫টিতে। অপরিবর্তিত আছে একটি স্টেশনের পানির সমতল। তথ্য পাওয়া যায়নি একটির।
চাটগাঁ নিউজ/এসআইএস