আইনজীবী হত্যাকাণ্ড— ৫২ সেকেন্ডের ভিডিওতে মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রাম আদালত ভবনের কাছে সেবক কলোনির একটি বাসার সামনের রাস্তায় পড়ে আছেন সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এক ব্যক্তি। তাকে একের পর কিরিচ দিয়ে আঘাত করছেন কমলা রঙের গেঞ্জি, কালো প্যান্ট ও মাথায় ছাই রঙের হেলমেট পরা এক যুবক। একইসঙ্গে আরও তিন-চারজন তাকে মারধর করছেন। এসময় আশপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন আরও ২৫-৩০ জন যুবক। এই দৃশ্য পুলিশের উদ্ধার করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে।

গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনা ঘটে। কিরিচ হাতে আঘাতকারী যুবকের নাম চন্দন দাস, যিনি পেশায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী।

পুলিশ জানিয়েছে, আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যার ঘটনায় চন্দন দাসসহ ২৫ থেকে ৩০ জন জড়িত ছিলেন। তাদের মধ্যে চারজন কুপিয়ে হত্যায় সরাসরি অংশ নেন। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ এ পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় তার অনুসারীরা বাধা দেন এবং প্রিজন ভ্যান আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও বিজিবি লাঠিচার্জ করে এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। এই পরিস্থিতি থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে আইনজীবীদের গাড়ি ভাঙচুর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের প্রতিবাদে কিছু আইনজীবী মিছিল বের করেন।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিল শেষে ফেরার পথে হোঁচট খেয়ে রাস্তায় পড়ে যান সাইফুল ইসলাম। তখনই তাঁকে ঘিরে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে রমিত দাস, সুমিত দাস, গগন দাস, নয়ন দাস, বিশাল দাস, আমান দাস, মনু মেথর ও রাজীব ভট্টাচার্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের বেশির ভাগই পরিচ্ছন্নতাকর্মী, আর একজন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।

৫২ সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজে মিলল যে চাঞ্চল্যকর তথ্য

পুলিশের সংগ্রহ করা ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপান চন্দন, ওম দাশ ও রনব। সাইফুলের নিথর দেহ রাস্তায় পড়ে থাকলেও লাঠিসোঁটা দিয়ে পেটাতে থাকেন অন্যরা। ঘটনাস্থলে আরও ২৫-৩০ জন উপস্থিত ছিলেন।

এ ঘটনার পর থেকে সেবক কলোনির অধিকাংশ বাসিন্দা ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। সেবক কলোনী এখন প্রায় পুরুষ শুন্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনার সঙ্গে কয়েকজন জড়িত থাকলেও পুরো কলোনি বিপদে পড়েছে। তারা দাবি করেন, নিরীহ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top