অবহেলায় শিশু রাইফার মৃত্যু: চিকিৎসকদের বিচার শুরু

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: নগরীর এক বেসরকারি হাসপাতালে সাংবাদিক কন্যা শিশু রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। যেখানে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছিল। ছয় বছর আগের এই ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচিত হন ডাক্তাররা।

আজ সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের প্রথম মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ কামাল হোসেন শিকদার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

চার চিকিৎসক হলেন – নগরীর মেহেদিবাগের ম্যাক্স হাসপাতালের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী খান, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় চৌধুরী ও ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত এবং হাসপাতালের তৎকালীন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শুভ্র দেব।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অতিরিক্ত মহানগর পিপি এম এ ফয়েজ জানান, চার আসামির উপস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ (এ) ধারায় অবহেলাজনিত মৃত্যু এবং ১০৯ ধারায় অবহেলার প্ররোচণার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আদালত পরবর্তী ধার্য তারিখ থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষী উপস্থাপনের জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।

ঘটনার প্রায় ছয় বছর পর গত ২৫ মার্চ মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক এ চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছিলেন।

জানতে চাইলে সাংবাদিক রুবেল খান বলেন, আলহামদুলিল্লাহ দীর্ঘ দিন পর শিশু রাইফা হত্যার বিচার আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। আশা করেছি নায্য বিচার পাবো। আমার দুর্দিনে যারা পাশে ছিলেন কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি। বিশেষ করে আমার  সাংবাদিক বন্ধুদের অবদান কখনো ভুলব না।

গলায় ব্যাথার চিকিৎসার জন্য ২০১৮ সালের ২৮ জুন বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রুবেল খানের আড়াই বছর বয়সী মেয়ে রাফিদা খান রাইফাকে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বিধান রায়ের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মৃত্যু হয় তার।

আকস্মিক শিশুটির মৃত্যুতে মুষড়ে পড়েন রাইফার বাবা-মা। শুরু থেকেই তারা অভিযোগ করে আসছিলেন, ভুল চিকিৎসায় তাদের মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। সাংবাদিক সংগঠনগুলো বিচার চেয়ে রাস্তায় নামে। চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনও (বিএমএ) পাল্টা কর্মসূচি শুরু করে। চিকিৎসকেরা রোগীদের সেবা দেওয়া বন্ধ করে দেন। এ নিয়ে সারাদেশে তোলপাড়ও সৃষ্টি হয়।

ওই বছরেরই ১৮ জুলাই চকবাজার থানায় হাসপাতালের চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন সাংবাদিক রুবেল খান। দুই দিন পর ২০ জুলাই পুলিশ সেটা মামলা হিসেবে গ্রহণ করে। মামলায় ওই চার চিকিৎসককেই আসামি করা হয়। এজাহারে রুবেল খান অভিযোগ করেন, চার চিকিৎসকের অবহেলা ও গাফিলতিতে রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় না হওয়া এবং ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক ও অতিরিক্ত মাত্রায় সেডিল প্রয়োগের কারণে তার আড়াই বছর বয়সী মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে।

এর মধ্যে র‌্যাব ও ‍ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর যৌথভাবে ম্যাক্স হাসপাতালে অভিযানও চালায়। এর প্রতিবাদে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে একদিনের চিকিৎসক ধর্মঘট পালিত হয়। এছাড়া রাইফার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটিও এ ঘটনার তদন্ত করে।

সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন কমিটি তদন্তে ভুল চিকিৎসার প্রমাণ না পেলেও কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা এবং গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায়। তদন্ত প্রতিবেদনে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে এই কমিটি। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ম্যাক্স হাসপাতালের বিভিন্ন ত্রুটির কথা তুলে ধরে।

এসব ঘটনার মধ্যেই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পড়ে পিবিআইয়ের ওপর। পাঁচ বছরেরও বেশিসময় ধরে তদন্তের পর অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় চার চিকিৎসককে আসামি করে, যারা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top