রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি: মাকে ঘর থেকে বের করে অন্যত্র জায়গা বিক্রি করে দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় চলে গিয়েছিলেন ছেলে। দীর্ঘ ৫ মাস ধরে পথে পথে নানা আশ্রয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন মা। বিষয়টি সিপ্লাস ও চাটগাঁ নিউজে তুলে ধরা হলে টনক নড়ে প্রশাসনের, মন গলে সে পাষণ্ড পুত্রের!
অবশেষে সে পুত্রের ঘরেই ঠাঁই হলো বৃদ্ধা পুষ্প বড়ুয়ার।
ঘটনাটি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড সৈয়দবাড়ি গ্রামে। গত ১ ডিসেম্বর ‘ভিটে বিক্রি করে ভাড়া ঘরে ছেলে, সত্তরোর্ধ মা ঘুরছেন রাস্তায় রাস্তায়’ শিরোনামে বৃদ্ধ মায়ের প্রতি সন্তানের এমন অমানবিক আচরণ এবং বৃদ্ধ মায়ের অসহায়ত্ব তুলে ধরে সিপ্লাস টিভি ও চাটগাঁ নিউজ-এ সংবাদ প্রকাশিত হয়। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় প্রশাসন, বৃদ্ধার দায়িত্ব নেয় স্থানীয় কয়েকজন যুবক।
জানা যায়, সংবাদ প্রকাশিত হবার পর স্থানীয় যুবকরা বৃদ্ধার ছেলে দেবু বড়ুয়াকে খুঁজে বের করেন। তাকে বুঝিয়ে মায়ের কাছে নিয়ে যান। নিজের ভুল বুঝে মায়ের পা ধরে ক্ষমা চান। পরে মা পুষ্প বড়ুয়াকে নিজের ভাড়া বাসায় তুলে নেন ছেলে দেবু বড়ুয়া।
এই ব্যাপারে প্রবাসী জীবন সিকদার জানান, প্রকাশিত প্রতিবেদনটি নজরে আসলে তিনি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বাসিন্দা আফসানসহ আরও কয়েকজন যুবককে বিষয়টি দেখার অনুরোধ জানান। পরবর্তীতে তারা দেবু বড়ুয়ার সাথে যোগাযোগ করে তাকে মায়ের কষ্টের কথা তুলে ধরে বুঝিয়ে মায়ের কাছে নিয়ে যান।
স্থানীয় যুবক রাঙ্গুনিয়া উপজেলা জিয়া মঞ্চের সহসভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম আফসান জানান, নিজের ছেলের বাসায় যেতে পেরে পুষ্প বড়ুয়া অনেক খুশি হয়েছেন।
বৃদ্ধা পুষ্প বড়ুয়া বলেন, ‘ছেলে আমাকে নিয়ে আসছে, আমি অনেক খুশি। অনেকদিন রাতে ঠিকমতো ঘুমুতে পারিনি। এখন আর কোনো অসুবিধা হবে না। ছেলেকে আশীর্বাদ করছি।’
ছেলে দেবু বড়ুয়া জানান, ৯ মাস বয়সে তার বাবা মারা যান। তিনি একমাত্র সন্তান। তিন বছর আগে তিনি বাড়ি বিক্রি করে মা ও স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় উঠেন। তিনি আরও জানান, তার মা বয়সের ভারে বিভিন্ন সময় এলোমেলো আচরণ করেন এবং অন্যদের সাথে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন।
মায়ের অভিযোগের বিষয়ে দেবু বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে এসবে মায়ের কোনো দোষ নেই। মা এসব বয়সের কারণেই করছেন।’ তিনি দাবি করেন, তার চাচাতো ভাইয়েরা মায়ের বয়সের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে ভুল বুঝিয়ে এসব করতে প্ররোচিত করেছেন।
দেবু আরও দাবি করেন, ‘তারা (চাচাতো ভাইয়েরা) ছোটবেলা থেকেই আমাদের হিংসে করে আসছেন। যে জায়গা বিক্রি করেছি সেগুলো অন্যদের কাছে বিক্রি করায় তাদের হিংসার পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। তাই তারা আমাকে মানুষ এবং সমাজের কাছে ছোট করার জন্য এসব করছেন।’
চাটগাঁ নিউজ/জগলুল/জেএইচ