চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের সব সীমান্ত দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত লোক পুশ ইন করছে-এসব বিষয়ে সরকার একটা কথাও বলেনি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় সরকারের পাওয়ারফুল উপদেষ্টা খোদা বখস কোথায় তাও জানতে চেয়েছেন তিনি।
আজ রবিবার (১১ মে) দুপুরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ফোরামের উদ্যোগে বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আমরা শুনেছি একজন খুব শক্তিশালী উপদেষ্টা রয়েছেন, যিনি সমস্ত স্বরাষ্ট্র ব্যবস্থাটা তিনি দেখেন। তার নাম খোদা বখস, তিনি নাকি খুব পাওয়ারফুল? আবার এটাও শুনি তিনি নাকি বিএনপিকে খুব একটা পছন্দ করেন না। নিজের মতো করে সব গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। এত শক্তিশালী উপদেষ্টা থাকার পরও আজকে এই ধরনের পরিস্থিতি কেন হচ্ছে?
তিনি বলেন, আজকে সাতক্ষীরা-কুড়িগ্রাম-খাগড়াছড়ি-মৌলভীবাজার এই সব সীমান্ত দিয়ে ভারত লোক ঢুকাচ্ছে, বাংলাদেশে পুশ ইন করছে- এসব বিষয়ে সরকার তো একটা কথাও বলেনি। কোথায় খোদা বখস?কোথায় সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তর?
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, কোথায় সরকার? তারা তো পুশ ইন বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এগুলোতো বিরাট এক অন্যায়। কোথা থেকে এই রাষ্ট্রীয় অপরাধগুলো করা হচ্ছে, পার্শ্ববর্তী দেশের লোক জোর করে ঢুকিয়ে দিতে চান? বাংলাদেশে আমাদের কি অত্যন্ত দুর্বল জাতি মনে করছেন আপনারা?
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ হওয়া একটা জাতি, ৩০ লাখ মানুষ জীবন দেওয়া একটা জাতি, দেড় হাজার শিশু বাচ্চা তরুণের জীবন দেওয়া একটা জাতি, সেই জাতিতে পার্শ্ববর্তী দেশ তার ইচ্ছামতো লোক ঢুকাবেন বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আর আপনারা নিশ্চুপ, টু শব্দ করছেন না এর কারণ কী? তাহলে তো শেখ হাসিনা যেমন করেছেন আপনারাও তাই করছেন। আমাদের সীমান্তে লোক হত্যা করলে শেখ হাসিনা একটা প্রতিবাদও করতেন না, টু শব্দ করতেন না, আপনারাও কেন আজকে একেবারে নিশ্চুপ নিরুত্তর?
এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তো সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সমর্থন করেছে,তারপরও কোন সাহসে পার্শ্ববর্তী দেশ জোর করে তাদের লোক আমাদের সীমান্ত দিয়ে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই, বলেন রিজভী।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর গঠিত হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যাদের কাছে মানুষ অনেক প্রত্যাশা করেছিল। তারা সংস্কারের কথা বলেছে জনগণ সে সংস্কারও মেনে নিয়েছে, তারা বলেছে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংস্কার করে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আরও অনেকেই বলেছে, এমনকি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও এই কথা বলেছে। আজকেও সংবাদমাধ্যমে দেখলাম কবিতা পরিষদ দ্রুত একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছে। কিন্তু সরকার এই ব্যাপারে নিরুত্তর, নিশ্চুপ। কিন্তু কেন? তাদের উদ্দেশ্যটা কি? এখন তো মানুষ ধীরে ধীরে নানা ধরনের সন্দেহ করছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সবচাইতে বড় সন্দেহ হচ্ছে যে সাবেক রাষ্ট্রপতি যিনি খুনের মামলার আসামি তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেলেন। আপনার গোয়েন্দা সংস্থার ক্লিয়ারেন্স না দিলে কি করে উনি যেতে পারেন? তিনি এমন রাষ্ট্রপতি যিনি বাংলাদেশের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য যার বিচার হওয়া উচিত, তিনি কি করে বিদেশে চলে গেলেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের হাওর-বাওড় আমাদের খাল-বিল এগুলো রক্ষা করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে মানুষ আন্দোলন করছে- তিনি তার এলাকা কিশোরগঞ্জে বিশাল হাওরের মধ্যে বিশাল রাস্তা বানিয়েছেন তার বাড়ি যাওয়ার জন্য। উনি তো ফ্যাসিবাদের প্রতিনিধি ছিলেন উনি তো শেখ হাসিনার কথায় চলতেন অর্থাৎ শেখ হাসিনার যে মাইন্ড সেট যে মানসিকতা, উনারও সেই মানসিকতা, দুজনের মধ্যে তো পার্থক্য হবে না। তাহলে সেই ব্যক্তি কিভাবে চলে গেলেন?তার তো লাল পাসপোর্ট আছে এটা কি সরকার জানত না, তার লাল পাসপোর্ট বাতিল করা হয়নি কেন? তিনি কি করে যেতে পারলেন?
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বলতেন, তিনি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন। তিনি লোক দেখানো নামাজের কথা বলতেন। উনি শিশুদের রক্ত ঝরিয়েও ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছেন, যোগ করেন রিজভী।
এ সময় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আব্দুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য রমেশ দত্ত, বৌদ্ধ ফোরামের নেতা সুশীল বড়ুয়া, প্রার্থ প্রতিম বড়ুয়া অপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন